কমনওয়েলথ স্পোর্টস। হতে পারে আপনি এর আগে এই নামটা শোনেননি। ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে অতি পরিচিত, কমনওয়েলথ গেমস। কমনওয়েলথ স্পোর্টসের একটি মহান লক্ষ্য রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সমাজের নানা বিপদে যাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন, এই স্পোর্টস তাঁদের নিয়েই। টুর্নামেন্টে অংশ নেবেন বাংলার প্রতিযোগীও। বাড়ির আসল ঠিকানা দশ ফুট বাই দশ ফুট! সেই বাড়ি থেকে কমনওয়েলথ স্পোর্টসে সোনা জেতার স্বপ্ন দেখছেন উত্তরপাড়ার অনিল সাউ। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
দেশের কোথাও বিপর্যয় হলেই ডাক পড়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের। সে হরপা বানই হোক বা পাহাড়ে ধসের কারণে রাস্তায় আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার। কিংবা ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধার করা। আর এ সবের জন্যেই চাই প্রকৃত ট্রেনিং। আর সেই ট্রেনিং করতে করতেই উত্তরপাড়ার অনিলের সামনে একটা দরজা খুলে যায়। দেশের হয়ে কমনওয়েলথ স্পোর্টসে অংশ গ্রহণের সুযোগ। পুনেতে অনুষ্ঠিত লাইভ সেভিং চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে কানাডা যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন অনিল। সারা ভারতে থেকে মাত্র ১২ জন এই প্রতিযোগিতায় সুযোগ পেয়েছেন। তার মধ্যে বাংলা থেকে মাত্র দু’জন। অনিল ছাড়া কলকাতার আরও একজন রয়েছেন। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর কানাডায় হবে সেই ‘লাইফ সেভিং সুইমিং’ প্রতিযোগিতা।
আর্থিক দিক থেকে খুবই দরিদ্র পরিবারের অনিল। বিদেশে যাওয়া তাঁর কাছে শুধুই স্বপ্ন। সেটাই বাস্তব হতে চলেছে এক মহান উদ্যোগে। অনিলের কোচ কৌস্তুভ বাগচি বলেন, ‘ও মানুষের জীবন বাঁচায়। এটা একটা মহান কাজ। ও যখন সাঁতারে এল, মোটিভেট করি। ওর যেটা প্যাশন সেই ইভেন্টে নামার কথা বলি। বাংলা থেকে প্রতিনিধিত্ব করে। জাতীয় প্রতিযোগিতায় ২৬৫ জনের মধ্যে সিলেক্ট হয়। ২৫ জনকে নিয়ে জাতীয় শিবির হয়। সেখান থেকে প্রথম ১২ জনে সুযোগ পেয়েছে। এটা একটা বড় ব্যাপার। অবশ্যই ওর আর্থিক সমস্যা আছে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি অনিলের পাশে থাকার।’
অনিলের দাদা সুনীল সামান্য মাইনের চাকরি করেন। ভাইকে কমনওয়েলথ স্পোর্টসে পাঠাতে মরিয়া চেষ্টা করছেন। সুনীল বলেন, ‘ভাই সুযোগ পেয়েছে কানাডা যাবার। অনিশ্চয়তা কাটেনি। রোজ সকাল-সন্ধ্যা ছুটে বেড়াচ্ছে স্পনসর জোগারের জন্য।’ ভাইকে কানাডা পাঠাতে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচ! কোথা থেকে আসবে এত টাকা? কে দেবে? উত্তর জানা নেই তাঁদের। সুযোগ এসেছে, কাজে লাগাতে চান অনিল। এই প্রতিযোগিতায় সোনার পদক জয়ই লক্ষ্য। চলছে কঠোর অনুশীলন। অনিল বলেন, ‘২০২১-২২ থেকে লাইফ সেভিং সুইমিং করি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছি। ২০২৩ সালে ব্যাঙ্গালোরে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় চারটি সোনা জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ বার যে সুযোগ পেয়েছি সেটা কাজে লাগাতে চাই। দেশের জন্য একটা সোনার পদক জিততে চাই।’
গল্পের কোনির মতো বাস্তবের অনিল কি পারবেন ‘ফাইট’ করতে? সেটাই এখন দেখার।