Lakshya Sen: কেন দ্রুত বিশ্বের এক নম্বর হয়ে উঠতে পারেন লক্ষ্য, লিখলেন তাঁর কোচ প্রকাশ পাড়ুকোন

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

Apr 02, 2022 | 10:04 PM

কোনও প্লেয়ারকে সাফল্য দিতে হলে একটা নির্দিষ্ট রোড ম্যাপ বানাতে হয়। লক্ষ্য সেনের জন্য এটাই করেছিলেন তাঁর কোচ প্রকাশ পাড়ুকোন। কী ভাবে উঠে এলেন প্রবাসী বাঙালি শাটলার? টিভি নাইন-এ সেই অজানা গল্প লিখলেন খোদ প্রকাশ।

Lakshya Sen: কেন দ্রুত বিশ্বের এক নম্বর হয়ে উঠতে পারেন লক্ষ্য, লিখলেন তাঁর কোচ প্রকাশ পাড়ুকোন
Lakshya Sen: কেন দ্রুত বিশ্বের এক নম্বর হয়ে উঠতে পারেন লক্ষ্য, লিখলেন তাঁর কোচ প্রকাশ পাড়ুকোন

Follow Us

প্রকাশ পাড়ুকোন

লক্ষ্য সেনের (Lakshya Sen) যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। উত্তরাখণ্ডের আলমোরা থেকে বেঙ্গালুরুতে এসে প্রকাশ পাড়ুকোন (Prakash Padukone) ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিতে যোগ দিয়েছিল। লক্ষ্য বাবা ধীরেন্দ্র কুমার সেন নিজেও সাইয়ের ব্যাডমিন্টন কোচ। উনি আসলে বড় ছেলে চিরাগ সেনকে অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। দাদার সঙ্গে লক্ষ্যও অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়ে যায়। তার আগে ও কিন্তু ২-৩ বছরের বেশি খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না।

কোচ বিমল কুমারই ওদের প্রথম দেখেছিল। আমি তখন শহরে ছিলাম না। বেঙ্গালুরুতে ফিরে আমি ৯ বছরের একটা বাচ্চা ছেলেকে দেখেছিলাম। বুঝে গিয়েছিলাম, একটা চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার আসতে চলেছে। ওর খেলার একটা স্পেশাল ব্যাপার ছিল। বেসিক ব্যাপারটা যেন ভীষণ ভালো ছিল, স্টাইল ও টেকনিকও ছিল চমৎকার। ওই বয়সেই কিন্তু কোনও ভুল না করে নিজের খেলাটা খেলত। সবচেয়ে বড় কথা হল, বয়সে বড় প্লেয়ারদের বিরুদ্ধে খেলার সময় লক্ষ্য শট বাছতে পারত। কোর্টে একজন ভালো প্লেয়ারের যে বুদ্ধি থাকা দরকার ছিল, সেটা যেমন ছিল, সঠিক সময়ে সঠিক শট নির্বাচন করতে পারত। সেন্টার কোর্ট থেকে বিপক্ষ খেলায়াড়কে নড়াচড়া করতে বাধ্য করত। তাতে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হত, সেখানে ওর নিখুঁত শটটা নিত। এই কঠিন কাজটা খুব সহজে করতে পারত ওই বয়সেই।

২০১০ সালের এপ্রিল মাসে অ্যাকাডেমিতে যোগ দেয় লক্ষ্য। ওর প্রতিভা দেখার পর আমরা কয়েকটা ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিই। সামনেই অলিম্পিক ছিল। অলিম্পিক গোল্ড কোয়েস্টের প্রতিষ্ঠা সদস্য হওয়ার কারণে আমি অন্যান্য সদস্যদের লক্ষ্যর প্রতিভার ব্যাপারে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম। ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল গোল্ড কোয়েস্ট। প্রথমেই আমরা ওকে জাকার্তায় তিন সপ্তাহের জন্য ট্রেনিং পাঠাই। টুর্নামেন্ট খেলা একটা ব্যাপার। কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে দেখেছি, বিদেশে ভালো কোনও অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করলে তার ফল অনেক ভালো পাওয়া যায়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে জাভায় অনূর্ধ্ব ১৫ একটা টুর্নামেন্ট খেলতে পাঠানো হয়। বয়স ১০ হলেও ওর থেকে বেশি বয়সের ভালো প্লেয়ারদের সঙ্গে খেলে, দ্রুত উন্নতি হবে। ডিসেম্বরে আবার ওকে সিঙ্গাপুরে লি-নিং যুব সিরিজ খেলতে পাঠাই। তাতে ও চ্যাম্পিয়ন হয়। ওটাই ছিল লক্ষ্যর জেতা কোনও প্রথম টুর্নামেন্ট। ওই সময় থেকেই ট্রেনিং এবং টুর্নামেন্টের মধ্যে একটা ভারসাম্য তৈরি করার চেষ্টা করে চলেছি। যাতে ওকে অন্য রকম প্লেয়ার তৈরি করা যায়।

লক্ষ্যর যখন ১৫-১৬ বছর বয়স, বুঝতেই পারছিলাম ও নিজের কেরিয়ারটা অন্য রকম ভাবে সাজাতে চলেছে। কিন্তু ওকে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলানোর জন্য দরকার ছিল টাকার। সেটা আমাদের ছিল না। এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে ছবি।

২০১৫-১৬ সাল থেকে বুঝতে পারছিলাম, লক্ষ্যকে যদি আরও সামনে এগিয়ে দিতে হয়, তা হলে ওর জন্য অন্য রকম কিছু করতে হবে। আমরা অ্য়াকাডেমি থেকে চারজনকে স্পট করেছিলাম। তার মধ্যে লক্ষ্যও ছিল। ওদের জন্য ট্রেনার ও ফিজিও রেখেছিলাম আমরা। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে এর আগে এমন ঘটেনি। ১৫ বছরের একটা বাচ্চা ছেলের জন্য ট্রেনার পাওয়া যায় না। ১৭ বছর বয়স থেকে ওর জন্য আলাদা ট্রেনার ও ফিজিও রাখা হয়। এর জন্য অনেকে সমালোচনা করেছিল। কিন্তু আমরা পরীক্ষার রাস্তা থেকে সরিনি।

লক্ষ্যর সাম্প্রতিক ফর্মের কারণ দুটো। এক, ২০২১ সালে থমাস কাপের টিম থেকে বাদ পড়েছিল ও। এটা যে একটা ধাক্কা ছিল, কোনও সন্দেহ নেই। সিলেকশন ট্রায়ালে একটা ম্যাচ খারাপ খেলার জন্য বাদ যেতে হয়েছিল ওকে। তার আগে কিন্তু এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে জোনাতন ক্রিস্টিকে হারিয়েছিল। তখন ওর ব়্যাঙ্কিং ৩০। নিজের কেরিয়ারের মধ্যে দিয়ে জানি, এই রকম ঘটলে যে কোনও প্লেয়ার জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে। আর দ্বিতীয় কারণটা হল, বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ার ভিক্টর অ্যাক্সেলসেনের সঙ্গে দুবাইয়ে দু’সপ্তাহের ট্রেনিং। এই দুটোই ফ্যাক্টর হয়ে গিয়েছে। এই দুটো ব্যাপার ওকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। ওই দুটো ব্যাপারই প্লেয়ার হিসেবে ওর দৃষ্টিভঙ্গী বদলে দিয়েছিল।

লক্ষ্যর উত্থানের পিছনে আর একটা বড় কারণ বিদেশি কোচ। আমরা অনেক আগে থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছিলাম, একজন বিদেশি কোচ আনার। কিন্তু আর্থিক কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত চিনের মহিলা ডাবলস টিমের প্রাক্তন কোচ ইও ইয়ং-সাংকে আমরা নিয়ে আসি। ২০১৯ সালে ও আসার পর থেকে পুরো ছবিটাই বদলাতে শুরু করেছে।

লক্ষ্য এখন ওর সেরা ফর্মের ধারাকাছে কোথাও আছে। কিন্তু ওর খেলায় অনেক উন্নতি দরকার। কোর্টে এবং শারীরিক ভাবেও। সক্ষমতাও বাড়াতে। এটা একদিনে সম্ভব নয়। সময় লাগবে। সাধারণত ভারতীয় প্লেয়াররা ২৬-২৭ বছর বয়সে ফর্মের শীর্ষে পৌঁছয়। সাইনা, সিন্ধুর মতো কেউ কেউ ব্যতিক্রমও হয়। আর তার জন্য দরকার পড়ে ঠিকঠাক ট্রেনিং, বিদেশে টুর্নামেন্ট, আর্থিক সাপোর্ট পেলে ২২ বছর বয়সেও সেরা ফর্মে পৌঁছনো যায়।

Next Article