টেনিস ব়্যাকেট তুলে রাখছেন রাফায়েল নাদাল। গত কয়েক বছর ধরে চোটেই কেটেছে তাঁর। চেষ্টা করেছেন ফেরার। ফিরেওছেন। কিন্তু আবার চোট হয়ে উঠেছে পাহাড়। বাধা টপকাতে টপকাতে ক্লান্ত রাফা অবশেষে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন, এ বার চির বিশ্রাম নেবেন। ডেভিস কাপ ফাইনালের পর আর কোর্টে দেখা যাবে না টেনিসের বাঁ হাতি রাজাকে। গত দুটো দশক সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত হয়েছে রাফা নাদালের সঙ্গে রজার ফেডেরারে লড়াই। প্রতিপক্ষ তো বটেই, কিন্তু বন্ধুও। নাদালের অবসরের ঠিক আগে খোলা চিঠি লিখলেন রজার ফেডেরার।
প্রিয় রাফা,
তুমি টেনিস থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে আছ। আবেগতাড়িত হয়ে পড়ার আগে আমি কিছু জিনিস শেয়ার করতে চাই। শুরুতেই বলে রাখা ভালো, আমি যত না পেরেছি, তুমি তার থেকে অনেক বেশি হারিয়েছ আমাকে। তোমার মতো আর কেউ চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি। ক্লে কোর্টে যখন তোমার মুখে নেমেছি, মনে হয়েছে তোমারই বাগানে পা রেখেছি। নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরিশ্রম করতে হয়েছে অনেক বেশি। আমি সংস্কারমনা নই। কিন্তু বাধ্য করেছ তুমি। তোমার পুরো প্রক্রিয়া, প্রার্থনা, যোদ্ধার মতো মাঠে নামা, চুল ঠিক করা— আশ্চর্য দক্ষতায় করেছ সে সব। তুমি এমনই। সবার থেকে আলাদা। তুমি খুব ভালো করে জানো, ওই ম্যাচগুলো উপভোগ করেছি সব সময়।
২০০৪ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর বিশ্বের এক নম্বর জায়গাটা পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, আমি সব কিছুর উপরে চলে গিয়েছি। ২ মাস পর মায়ামি ওপেনে লাল স্লিভলেস টি-শার্ট পরে নামলে তুমি। তোমার বাইসেপ দেখালে। আর কী আশ্চর্য, আমাকে দাঁড় করিয়ে হারিয়ে দিলে। শুনেছিলাম, ম্যালোরকা থেকে একটা প্লেয়ার এসেছে। ভীষণ প্রতিভাবান। যে কোনও দিন গ্র্যান্ড স্লাম জিতবে। যা শুনেছিলাম, ভুল নয়। ২০ বছর পর বলতে ইচ্ছে করছে রাফা, অতুলনীয় একটা কেরিয়ার তুলে ধরলে তুমি।
তোমার সঙ্গে কোর্টে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা ভাবছি। ক্লে, ঘাস যাই হোক না কেন, আমাদের খেলা দেখতে লোক উপচে পড়েছে। ফলাফল যাই হোক না কেন, দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে ট্রফি হাতে দাঁড়িয়েছি। ২০১৬ সালে মালোরকাতে রাফা নাদাল অ্যাকাডেমির উদ্বোধনে ডেকেছিলে, ভুলব না। তুমি বরাবর সারা বিশ্বের বাচ্চাদের আইকন হয়ে থেকেছ। আমার বাচ্চারাও তোমার অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করেছে। তখন ভয়ই হত, ওরা বাড়ি বাঁ হাতে টেনিস খেলতে শুরু না করে।
২০২২ সালে লন্ডনে লেভা কাপ। আমার কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ। সে দিন তুমি আমার প্রতিপক্ষ ছিলে না, ছিলে আমার ডাবলস পার্টনার।
রাফা জানি, তুমি জীবনের শেষ ম্যাচ খেলতে নামছ। কেরিয়ার নিয়ে আমরা পরে বসে কথা বলব। তোমাকে আপাতত ধন্যবাদ জানাতে চাই।
তোমার ভক্ত,
রজার।