অভিষেক সেনগুপ্ত
এ যেন অনেকটা ফিরে আসার গল্প। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকের (Rio Olympics) প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের (Pre quarter finals) ব্যাক্তিগত রিকার্ভ ইভেন্ট থেকে শুট-অফেই বিদায় নিয়েছিলেন অতনু (Atanu Das)। সে দিনও তাঁর উল্টো দিকে ছিলেন এক কোরিয়ান আর্চার। লি সেয়ুং ইউনের বিরুদ্ধে সে দিনও শুট-অফে দরকার ছিল ১০ পয়েন্ট। কিন্তু ৯ মেরেছিলেন তিনি।
কোরিয়ান আর্চারও তাই। বুলস আইয়ের কাছাকাছি মারার সুবাদে পরের রাউন্ডে যান লি সেয়ুং। ওই হারের পরই অতনু বুঝেছিলেন, সাফল্য আর ব্যর্থতার মাঝে থাকে সামান্য কিছু দূরত্ব। চাপের মুহূর্তে যেটা অর্জন করার জন্য মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়।
৫ বছর পর আবার সেই শুট-অফ। আবার সেই কোরিয়ান আর্চার। এ বার আর অতনুকে যন্ত্রণাবিদ্ধ হতে হল না। ফিরে এলেন প্রবল ভাবে। সব হিসেব উল্টে দিয়ে। অঘটন ঘটিয়ে। ২০১২ সালের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ও প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কোরিয়ান তিরন্দাজ জিন হেকের বিরুদ্ধে প্রথম সেটটা হেরে গিয়েছিলেন বাংলার তিরন্দাজ। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন। টোকিও অলিম্পিকে ৬-৫ জিতে ছেলেদের ব্যক্তিগত বিভাগে প্রি-কোয়ার্টারে উঠলেন তিনি।
প্রথম সেট হেরে পরের তিনটে সেটে ড্র করেছিলেন অতনু। শুট-অফে জিন হেক প্রথম শটটাতে ৯ পয়েন্ট মেরেছিলেন। ম্যাচ জিততে গেলে ১০ পয়েন্ট মারতেই হত বাংলার ছেলেকে। তীব্র চাপের মধ্যে পড়েও ফোকাস হারাননি তিনি।
Atanu Das pulls out the huge ? in a shoot-off to upset London 2012 @Olympics Champion Oh Jin Hyek! What a shot! ?#ArcheryatTokyo #archery pic.twitter.com/OVlWxTsBwF
— World Archery (@worldarchery) July 29, 2021
ওই মুহূর্তে কতটা চাপ ছিল? অতনু বলেছেন, ‘সত্যিই টেনশন হচ্ছিল। এর আগেও শুট-অফে নেমেছি। যে কারণে কতটা চাপ থাকে আমি ভালো করেই জানি। আমি জানতাম, শুট-অফে কোরিয়ার আর্চারই প্রথম শটটা নেবে। ও যদি ৯ মারে, তা হলে আমার একটা জেতার জায়গা তৈরি হতে পারে। তা-ই ঘটেছিল। আমি শুধু নিজের ফোকাসটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। ওই পরিস্থিতিতে যে কেউ জিততে পারত ম্যাচটা। ভালো লাগছে যে, চাপ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত আমিই জিততে পেরেছি।’
যদি হিসেব দেখা হয়, গত শতাব্দীতে অলিম্পিক (Olympics) থেকে পদক এনেছেন বাঙালিরা। কখনও হকিতে, কখনও টেনিস থেকে। লেসলি ক্লডিয়াস, গুরবক্স সিং, বীরবাহাদুর ছেত্রী, লিয়েন্ডার পেজরা পদকের আলো ফুটিয়েছেন অলিম্পিকে। কিন্তু এই অলিম্পিকে একমাত্র বাঙালি হিসেবে পদকের কাছাকাছি যেতে পেরেছিলেন শুটার জয়দীপ কর্মকার। চতুর্থ হয়েছিল লন্ডন অলিম্পিকে। তার পর আবার পদকের পদধ্বণি শোনাচ্ছেন অতনু। এ বারের অলিম্পিকে শুরু থেকেই পদকের প্রত্যাশা জাগাচ্ছিলেন ভারতীয় তিরন্দাজরা। কিন্তু টিম ইভেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছেন দীপিকা কুমারী, অতনু দাসরা। ব্যক্তিগত ইভেন্টে যেন ভারতের প্রথম অলিম্পিক দম্পতি পদকের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
শেষ ১৬য় ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে রুপো পাওয়া তিরন্দাজ জাপানের তাকাহারু ফুরুকাওয়ার বিরুদ্ধে নামবেন অতনু। যাঁকে নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘সেরাটাই দেওয়ার চেষ্টা করব। দেখা যাক কী হয়।’
শনিবার সকাল ৭টা ১৫য় সারা বাংলা, সারা ভারত বসবে টিভির সামনে। অতনু দাসের হয়ে গলা ফাটানোর জন্য। জাপানি ফুরুকাওয়াকে যদি হারাতে পারেন, তা হলে ইতিহাস তৈরি করবেন। আর তারপর, আর দুটো ম্যাচ যদি জেতেন, আর্চারি থেকে প্রথম পদক নিশ্চিত করে ফেলবেন অতনু।
অলিম্পিকের আরও খবর জানতে ক্লিক করুনঃ টোকিও অলিম্পিক ২০২০