টোকিও: সোনার ছেলের সোনার কীর্তি। ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন নীরজ চোপড়া (Neeraj Chopra)। প্রত্যাশা ছিলই। আর সেটা পূরণ করলেন। পানিপথের ছেলে আকাশ ছুঁলেন। জ্যাভলিনে সোনা জিতে তাক লাগিয়ে দিলেন নীরজ। স্বাধীন ভারতে এই প্রথম বার। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে পদকের খিদেই শুধু মেটালেন না, এনে দিলেন সোনা। আজকের পর ৮৭.৫৮ মিটার সংখ্যাটা উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।
অ্যাথলেটিক্সে (Athletics) ভারতকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মিলখা সিং। পদক না আসলেও ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে তাঁর অবদানই ছিল ভারতীয় অ্যাথলিটদের মধ্যে অন্যতম সেরা। পারেননি পিটি ঊষাও। দুজনকেই থামতে হয়েছিল চার নম্বরে। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড থেকে শুধু একটা পদকের স্বপ্ন দেখেছিল ১৩০ কোটির ভারত। একরাশ হতাশা আর আক্ষেপ নিয়েই অলিম্পিক শুরুর কয়েকদিন আগে মৃত্যু হয় কিংবদন্তী অ্যাথলিট মিলখা সিংয়ের। আজ তিনি বেঁচে থাকলে সবচেয়ে খুশি হতেন। গর্ব করতেন নীরজকে নিয়ে। টোকিওর মঞ্চে বাজল জাতীয় সঙ্গীত। এই দৃশ্য ভারতীয় ক্রীড়াজগতে আজীবন ফ্রেমবন্দি হয়ে থাকবে।
সোনার ছেলে নীরজ চোপড়া পদক উৎসর্গ করলেন মিলখা সিংকে। অলিম্পিকের আসরে যে সমস্ত ভারতীয়রা অল্পের জন্য পদক জিততে পারেননি তাঁদেরকেও পদক উৎসর্গ করলেন নীরজ। যাঁরা অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া করেন, শুধুমাত্র তারাই বোঝেন পদক না পাওয়ার যন্ত্রণা। নীরজও একজন উঁচু দরের অ্যাথলিট। তিনিও জানেন ব্যর্থতার কাঁটা কি জিনিস। তাইতো আনন্দের দিনেও সেই সমস্ত অ্যাথলিটদের স্মরণ করলেন নীরজ।
সোনাজয়ী নীরজ বলেন, ‘ফিনল্যান্ডে থাকার সময় মিলখা সিং প্রয়াত হন। খুব খারাপ লেগেছিল সেই সময়। তিনি বেঁচে থাকাকালীন কখনও তাঁর সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য হয়নি। আমি চেয়েছিলাম অলিম্পিকের পদক জিতে মিলখা সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে। দুর্ভাগ্যবশত তা হল না। আমার ধারণা, উনি ওপর থেকে ঠিক দেখছেন। এটা দেখে উনি খুশিও হবেন। কারণ আজ তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। পিটি ঊষা এবং আরও অনেক ভারতীয় অ্যাথলিট যাঁরা কয়েক সেন্টিমিটারের ব্যবধানে অলিম্পিকে পদক হাতছাড়া করেছেন, তাঁদেরকে এই সোনা উৎসর্গ করলাম। আশা করি, আজ তারা সবাই খুব আনন্দিত।’
নীরজ আরও বলেন, ‘কোয়ালিফিকেশনে শীর্ষে শেষ করায় আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। কোয়ালিফাইং রাউন্ডের পর অনুশীলনেও নিজেকে সাবলীল মনে হয়েছে। ভেবেছিলাম, আজ হয়তো নিজের সর্বোচ্চ রেকর্ড ভেঙে দিতে পারব। সেই সঙ্গে অলিম্পিকের রেকর্ড (৯০.৫৭ মিটার) ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যেও ছিলাম। দ্বিতীয় থ্রোয়ের সময় ভেবেছিলাম, হয়তো সেটা হয়েই গেছে। কিন্তু অল্পের জন্য একটু দূরে থামতে হল। যাই হোক, সেটা কোনও ব্যাপার নয়। আমার সঙ্গে এখন অলিম্পিকের সোনা আছে। এটাই সবচেয়ে মূল্যবান।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিনব বিন্দ্রার পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে আমি সোনা জিতলাম। ভালো লাগার বিষয়। অলিম্পিকে সোনা জেতাই আমার লক্ষ্য ছিল। কঠোর পরিশ্রম করে এরপর জাতীয় রেকর্ডও ভেঙে দেব।’
অলিম্পিকে পদকের লক্ষ্যে সচেষ্ট থাকতে সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। তিনি বলেন, ‘আমার ইভেন্টে ফোকাস থাকতে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। অনলাইনে অনেকে অনেক কিছু বলে। তাতে মন সরে যায়। নিজেকে ১০০ শতাংশ দেওয়ার জন্য এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকো। আর তাতে এমন কিছু যায় আসে না। খেলায় মন দেওয়াটাই আসল।’
অলিম্পিকের আরও খবর পড়তে ক্লিক করুনঃ টোকিও অলিম্পিক ২০২০