রক্তিম ঘোষ
কলকাতাঃ অদম্য জেদশক্তি মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে, ভারতীয় খেলাধূলায় তাঁর সেরার সেরা উদাহরণ বোধ হয় তেজস্বিনী সাওয়ান্ত(TEJASWINI SAWANT)। মহারাষ্ট্রের) কোলাপুরের এই শ্যুটার এই প্রথমবার অলিম্পিকের (TOKYO OLYMPIC)যোগ্যতা অর্জন করেছেন। বহু বছর ধরে তিনি ভারতীয়(INDIA)শ্যুটিং(SHOOTING) সার্কিটে একটা নাম। কিন্তু কিছুতেই অলিম্পিকের শিঁকে ছিঁড়ছিল না। অবশেষে টোকিও অলিম্পিকের জন্য যোগ্যতা অর্জন করলেন তেজস্বিনী। আর এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে এক বাঙালি। তেজস্বিনীর ব্যক্তিগত কোচ বাংলার শ্যুটার কুহেলি গঙ্গোপাধ্যায়(KUHELI GANGULY)।
মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের তেজস্বিনী ২০০৪ সাল থেকে রয়েছে ভারতীয় শ্য়ুটিং সার্কিটে। ২০০৬ সালে কমনওয়েলথে গেমসে প্রথমে নজরে পড়েন তেজস্বিনী। সেবার মেলবোর্নে ১০মিটার এয়ার রাইফেল ও ১০মিটার এয়ার রাইফেল পেয়ার্স বিভাগে সোনা জিতে নজর কাড়েন তেজস্বিনী। তবে বেজিং অলিম্পিকে যোগ্য অর্জনে ব্যর্থ হন তেজস্বিনী। এরপর একের পর এক সাফল্য মুকুটে জুড়েছে তেজস্বিনীর। ২০০৯ সালে মিউনিখে শ্যুটিং বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জ। ঠিক তার পরের বছরই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ৫০মিটার রাইফেল প্রোন বিভাগে সোনা জিতে তাক লাগিয়ে দেন তেজস্বিনী সাওয়ান্ত। তার সঙ্গে জুড়েছে দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে দুটি রুপো ও একটি ব্রোঞ্জ। এত সাফল্যের পরও অলিম্পিকের দরজা খুলছিলনা তেজস্বিনীর। অবশেষে খুলল। টোকিও অলিম্পিকের ছাড়পত্র পেলেন তেজস্বিনী সাওয়ান্ত। আর তাঁর এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি, লড়াই যিনি সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছেন, তিনি বাংলার শ্যুটার কুহলি গঙ্গোপাধ্যায়। তেজস্বিনীর ব্যক্তিগত কোচ।
টিভি নাইন বাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় কুহেলি বলেন, “আমি তো শুধু ওঁর কোচ নই। আমি ওঁর সঙ্গে একই দলে থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করি।তেজস্বিনীর থেকে আমি ১০ বছরের বড়। এই বয়সে আমার প্রতিযোগিতায় নামা দেখে ও উদ্বুদ্ধ হয়। তেজস্বিনীই অনেক জায়গায় এই কথাটি বলেছে। আর ওঁর লড়াইটা বরাবরই শিক্ষণীয়।”
কুহেলি বাংলার অন্যতম নামী শ্যুটার। জয়দীপ কর্মকারের আগে বাংলার শ্যুটিং যাঁকে চিনত, তিনি কুহেলি।তেজস্বিনী কুহেলিকে ডাকেন দিদি বলে। কুহেলি জানান, “আজকে যে নতুন প্রজন্ম শ্যুটিংয়ে আসছে, তাঁদের প্রতিভা অনেক। তারসঙ্গে পাচ্ছে আধুনিক পরিকাঠামো। তাদের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার জন্য চাই অদম্য জেদ। হার না মানা মানসিকতা। যেটা ভীষণভাবে রয়েছে তেজস্বিনীর মধ্যে।”
১৭ বছর ধরোে ভারতীয় শ্যুটিং সার্কিটে তেজস্বিনী। এত বছর ধরে টিকে থাকা কম কঠিন নয়, মত কুহেলির। কারন, বর্তমানে অনেক প্রতিভাধর শ্যুটারই আসছেন ধুমকেতুর মত, হারিয়েও যাচ্ছেন সেরকম গতিতে। এই পরিস্থিতিতে তেজস্বিনী একটা উদাহরণ, মনে করেন কুহেলি। একসময় ভারতের নামী শ্যুটার অঞ্জলি ভাগবতের সঙ্গে খেলতেন কুহেলি। বাংলার শ্যুটারের দাবি, অঞ্জলির পর তেজস্বিনী তাঁর দেখা অন্যতম সেরা শ্যুটার। আলাপচারিতার শেষে কুহেলির মন্তব্য, “তেজস্বিনী যেই পরিবার থেকে উঠে এসে ধীরে ধীরে এই জায়গায় পৌঁছেছে, সেটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে। এত তো বায়োপিক হয় বলিউডে। ওর জীবনে যা লড়াই আছে, তা নিয়ে দিব্যি একটা বায়োপিক তৈরি হতে পারে।”