হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি পলিসিতে পরিবর্তন আসতে চলেছে। তার জেরে ইউজারদের ব্যক্তিগত তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হয়ে যেতে পারে বলে শোনা গিয়েছে। এরপর থেকে অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপে নিজেদের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করেছেন। পাশাপাশি ডাউনলোড করেছেন ‘সিগন্যাল’ অ্যাপ। বিশ্ব বিখ্যাত ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাণ সংস্থা টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক এবং পেটিএম-এর সিইও বিজয় শঙ্কর শর্মা প্রকাশ্যেই ‘সিগন্যাল’ অ্যাপ ব্যবহারের কথা বলেছেন।
গত কয়েকদিনে হু হু করে বেড়েছে ‘সিগন্যাল’ অ্যাপ ডাউনলোডের হার। গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপেল প্লে স্টোরে অ্যাপ তালিকার শীর্ষে রয়েছে এই ‘সিগন্যাল’ অ্যাপ।
কিন্তু এই ‘সিগন্যাল’ অ্যাপের নির্মাতা কে?
সম্প্রতি শোনা গিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ এবং সিগন্যাল, এই দুই অ্যাপের নির্মাতা একই লোক, ব্রিয়ান অ্যাকটন। ব্রিয়ান ছিলেন অ্যামেরিকান কম্পিউটার প্রোগ্রামার। অ্যাপেল, অ্যাডব সিস্টেম, ইয়াহু- সহ একাধিক বড় কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালে পার্টনার জান কউম (ইয়াহুর প্রাক্তন কর্মী)-এর সঙ্গে মিলে হোয়াটসঅ্যাপ নির্মাণ করেন। ২০০৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ায় এই অ্যাপ লঞ্চ করেন তাঁরা। এর পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে ফেসবুকের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করে দেন ব্রিয়ান অ্যাকটন।
কিন্তু প্রথমেই হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে বেরিয়ে আসেননি ব্রিয়ান। বরং নগদ ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কোম্পানির আংশিক সত্ত্ব পাওয়ার পরও হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। আখেড়ে লাভই হয়েছিল ব্রিয়ানের। তবে তিন বছর পর ২০১৭ সালে হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন তিনি। শোনা যায় যে সময় মার্ক জুকারবার্গের সঙ্গে চূড়ান্ত মতবিরোধ হয়েছিল ব্রিয়ান অ্যাকটনের।
সেই সময় ফোর্বসের একটি সাক্ষাৎকারে ব্রিয়ান জানান, ফেসবুক সিইও মার্ক জুকারবার্গ হোয়াটসঅ্যাপে টাকা ঢালতে চাইছেন বিজ্ঞাপনকে হাতিয়ার করে। আর এই কারণেই হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। হোয়াটসঅ্যাপ থেকে অবসর নেওয়ার ১০ মাস পর আচমকাই একটি টুইট করেন ব্রিয়ান। ২০১৮ সালের ওই টুইটে ব্রিয়ান লেখেন, “এটাই সময়। #deletefacebook”। নিজের মন্তব্যের সপক্ষে কোনও যুক্তি দেননি ব্রিয়ান। আর এখনও পর্যন্ত ওটাই ব্রিয়ানের শেষ টুইট।
It is time. #deletefacebook
— Brian Acton (@brianacton) March 20, 2018
এরপর ২০১৮ সালে Open Whisper Systems-এর Moxie Marlinspike- এর সঙ্গে সংযুক্ত হন ব্রিয়ান অ্যাকটন। এরপর সিগন্যাল নামক নন-প্রফিট সংস্থার মাধ্যমে ‘সিগন্যাল’ এনক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপ তৈরি করেন অ্যাকটন। প্রাথমিক ভাবে সাংবাদিক এবং মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়া অ্যাক্টিভিস্টরা এই অ্যাপ ব্যবহার করতেন। তবে বর্তমানে আমজনতার দরবারে এই অ্যাপের চাহিদা সর্বাধিক। ভারত ছাড়াও জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, ফিনল্যান্ড, হংকং এবং সুইৎজারল্যান্ডেও এই ‘সিগন্যাল’ অ্যাপ ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে ‘মোস্ট ডাউনলোডেড অ্যাপ’-এর তালিকায়।
একসঙ্গে অসংখ্য লোক সিগন্যাল ডাউনলোড করে অ্যাকাউন্ট খোলার চেষ্টা করায় স্লো হয়ে গিয়েছে পরিষেবা। যদিও সিগন্যাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান হবে। ইউজাররা যেন তাদের পাশে থাকেন।
‘নো অ্যাড, নো গেম, নো গিমিক’ এই ধারনা নিয়েই সিগন্যাল অ্যাপ তৈরি করেছেন ব্রিয়ান অ্যাকটন। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে লঞ্চ হয় এই অ্যাপ। ঠিক দু’বছরের মাথায় গুরুত্ব বেড়েছে এই অ্যাপের। এই দু’বছর বিভিন্ন গ্র্যান্ট এবং ডোনেশনের মাধ্যমেই চলেছে ‘সিগন্যাল’ অ্যাপ। টুইটারের সিইও জ্যাক ডরসে সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, এভাবেই এ ধরণের মেসেজিং অ্যাপ তৈরি হওয়া প্রয়োজন।