Global Warming Effets: বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) বিশ্বের দেশগুলির সামনে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছরে, অনেক দেশেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভারী বর্ষণ ও বন্যা দেখা গিয়েছে। এছাড়াও গবেষকরা প্রতিনিয়ত সতর্কবার্তা জারি করছেন। বর্তমানে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারতের নদী নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে যে ফলাফল পেয়েছেন, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন গবেষকরা। হিমালয় থেকে বেরিয়ে আসা বড় নদীগুলি শীঘ্রই শুকিয়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। নদীগুলির জলস্তর দ্রুত নীচে নেমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মতো নদীগুলির 2050 সালের মধ্যে জলস্তর কমে শুকিয়ে যেতে পারে। আর এর ফলাফল হবে ভয়াবহ। এর কারণে বিভিন্ন শহরের 170 থেকে 240 কোটি মানুষ জল এক বিন্দুও জল পাবে না।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে কারণ কী?
আন্তোনিও জানাচ্ছেন যে, হিমবাহ পৃথিবীর প্রাণের প্রধান উৎস। বর্তমানে পৃথিবীর 10 শতাংশ হিমবাহ রয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে সেগুলি দ্রুত গলে যাচ্ছে। অ্যান্টার্কটিকায় প্রতি বছর 15 বিলিয়ন টন বরফ গলে যাচ্ছে। গ্রিনল্যান্ডেও প্রতি বছর 27 বিলিয়ন টন বরফ গলতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, অ্যান্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডের পর সবচেয়ে বেশি হিমবাহ রয়েছে হিমালয়ের উপরে। যেগুলি বর্তমানে দ্রুত গলে যাচ্ছে। আর এশিয়ায়, 10টি প্রধান নদী হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এগুলি বর্তমানে 130 কোটি মানুষকে পানীয় জল সরবরাহ করছে। তাহলে এবার আপনিই ভাবুন এ হারে হিমবাহের বরফ গলতে শুরু করলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রবাহ ও জলস্তরের ওপর। এখানেই শেষ নয়, হিমবাহ দ্রুত গললে পাকিস্তান ও চিনে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
উষ্ণায়নের খুব বড় প্রভাব পড়েছে হিন্দুকুশ হিমালয়ে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের (2,175 মাইল) ওই সুবিশাল পার্বত্য এলাকার মধ্যে রয়েছে মোট 8টি দেশ। সেগুলি হল বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চিন, নেপাল, ভূটান, আফগানিস্তান ও মায়ানমারের বড় একটি অংশ। যেখানে গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, আমু দরিয়া, তারিম, ইরাওয়াড়ি, সালউইন, ইয়েলো ও ইয়াংঝের মতো 10টি প্রধান নদী রয়েছে।
গঙ্গা শুকিয়ে গেলে বা জল কমে গেলে কী হবে?
গঙ্গাকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র নদী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর দৈর্ঘ্য 2500 কিলোমিটার। অনেক রাজ্যে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ জীবিত রয়েছে এই জলের উপর নির্ভর করে। এটি গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে জল পাচ্ছে। কিন্তু এই হিমবাহ নিজেই বিপদে পড়েছে। তাই গঙ্গাকে বাঁচানোর ক্ষমতা গঙ্গোত্রী হিমবাহেরও নেই। একমাত্র বাঁচাতে পারে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধ। উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি আরও 1.5 ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে, তাহলে শুধুই হিমবাহের তাপমাত্রা বাড়বে 0.3 ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর তাতে উত্তর-পশ্চিম হিমালয় আর কারকোরাম পর্বতমালার তাপমাত্রা বাড়বে 0.7 ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেক্ষেত্রে গঙ্গার অবস্থা কীরূপ হবে তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না।
মানুষকে সচেতন হতেই হবে। বন্যা কিংবা খরা যে কতটা প্রাণঘাতী, তা সম্পর্কে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ওয়াকিবহাল। গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন যত কম হবে, যত তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো যাবে, ততই সবুজ হবে প্রকৃতি। নদ-নদী থাকবে জলে পরিপূর্ণ। সুজলা সুফলা হবে দেশ।