Eco Friendly Cool House: প্রচণ্ড গরমে আপনাকে স্বস্তির স্বাদ দিতে পারে ঠান্ডা পানীয়। হ্যাঁ, বাড়িতে AC যদি না-ও থাকে, তাহলেও তো বহু দূর থেকে ঘুরে এসে ঠান্ডা জল, আম পান্না, লেবুর শরবত, শিকাঞ্জি থেকে শুরু করে কত কী-ই যে আমাদের গলাটা ভিজিয়ে মন আর শরীর ঠান্ডা করতে পারে, তার ইয়ত্তা নেই। এপ্রিল মাসে তীব্র গরমের শুরু হওয়া থেকে জুলাই ইস্তক নিজেদের ঠান্ডা করার হরেক পন্থা খুঁজতে থাকি আমরা। দেশের এমন জায়গাও রয়েছে, যেখানে তাপমাত্রা হেলায় 48 ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। কিন্তু তা বলে তো আর সকলের পক্ষে Air Conditioner ব্যবহার করা সম্ভব নয়। শুকনো, শুষ্কপ্রবণ অঞ্চলগুলোর কথা ভেবে দেখুন একবার। সেখানে প্রতিটা বাড়িতে এতটাই বেশি পরিমাণে AC, Cooler চলতে থাকে যে ঘন-ঘন লোডশেডিংই সেখানে একপ্রকার দস্তুর হয়ে ওঠে। এত লোড আসবে কোথা থেকে? তাছাড়াও তো AC ব্যবহারের আরও একাধিক সমস্যা রয়েছে। শারীরিক সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনই আবার মাত্রাতিরিক্ত ইলেকট্রিসিটি বিলও একটা বড় বিষয়। এত কিছু সত্ত্বেও কি আমরা AC ছাড়া বাঁচার পথ খোঁজার চেষ্টা করেছি?
আমরা ভাবিনি। হয়তো বা ভেবেওছি। তবে গুজরাটের একটি পরিবার শুধু ভাবেনি। তারা করেও দেখিয়েছে। প্রচলিত বাড়ির ধারণা থেকে কয়েক ক্রোশ দূরে গিয়ে গুজরাটের ভারুচে তৈরি হয়েছে ‘COOL House’। না, যদি ভাবেন গোটা বাড়িটা Central AC-তে মোড়া, তাহলে ভুল ভাবছেন। কারণ, বাড়িটা কোনও রকমের AC ছাড়াই এয়ার কন্ডিশনারের থেকেও বেশি ঠান্ডা এবং আরামদায়কও। 5 বছরেরও বেশি সময় লেগেছে সেই বাড়িটি তৈরি করতে। বাড়ির স্কেচ থেকে শুরু করে নকশা তৈরি, এই সব কিছুইতেই সবথেকে বেশি সময় লেগেছে। সমীরা রাঠৌর ডিজ়াইন অ্যাটলিয়ারের প্রধান সমীরা রাঠৌর সেই বাড়ির ডিজ়াইনটি করেছেন।
বাড়ির কাঠামো বাইরে থেকে বন্ধ
জায়গাটি তিনটি কাঠামো দ্বারা বেষ্টিত। তার একপাশে রয়েছে একটি রাস্তা। ওই বাড়ি থেকে দৃশ্যমান কেবলই প্রতিবেশীর বিল্ডিংটি। আসলে দূষণ থেকে রক্ষা দিতেই বাড়িটিকে অন্তর্মুখী করা হয়েছে, সেখান থেকে কোনও কিছুই সে ভাবে দৃশ্যমান হবে না। তার উপরে আবার এই বাড়িটি এমনই, যেখানে আপনি প্রবেশ করার পরে সেটি একপ্রকার নিজে থেকে খুলে যাবে। বাইরে থেকে বাড়িটিকে স্রেফ একটি সুন্দর কাঠামো বলে মনে হবে। বাড়ির উঠোনে রয়েছে সুন্দর গাছপালা। সেখান থেকে আপনার এমনই একটি ধারণা তৈরি হবে, যেন আপনি ভিতরের থেকে বাইরের দিকেই বেশি চেয়ে আছেন। উঠোনে যে গাছপালা ও রাস্তা রয়েছে, তা বাড়ির অন্দরেই। সেই মনোরম দৃশ্যকে বাড়ির বাইরের অংশ ভাবলে ভুল করবেন!
বাতাসের প্রবেশপথ
প্রাসাদটি 10,500 বর্গফুট জমির উপর অবস্থিত। এর একটি স্বতন্ত্র আকৃতি রয়েছে যা বাড়ির মধ্যে দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হতে দেয়। আর্কিটেক্ট সমীরা বাড়িটিতে ভারুচের ঠান্ডা আবহাওয়া ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে বিস্তৃত বাতাসের জন্য একটি পথ তৈরি করেছিলেন। সেখানেই রয়েছে উঠোন, যা বায়ুপ্রবাহকে জায়গা করে দেয়। বাড়িটি একটি ট্র্যাকের আকারে তৈরি করা হয়েছে, যার উভয় পাশে রয়েছে একাধিক কক্ষ। এই বাড়িতে বাতাস প্রবেশ করলেই তা শীতল হয়ে যায়। কারণ, বাড়িটির দক্ষিণ দিকে রয়েছে ওয়াটার বডি। সেখানে বাতাস প্রথমে হাল্কা গরম হওয়ার পরে ঘরটিকে পুরো শীতল করে দেয়।
ঘর ঠান্ডা রাখতে আরও অনেক কিছু
ওই ওয়াটার বডি বা চ্যানেল ছাড়াও বাড়িটির টেরেসেও ক্ষুদ্র আকারে এমনই ভাবে জলাশয় রাখা হয়েছে, যা পুরো বাড়িটাকেই শীতল করে রাখে। তার ঠিক নিচেই দেওয়া হয়েছে তারের জালি, যা শীতল প্রবাহ দিতে সাহায্য করে। এক-একটা ঘরে 18 ইঞ্চির পুরু বাহ্যিক দেওয়াল রয়েছে, যা গরমের সঙ্গে লড়াই করার জন্য চুনের প্লাস্টার করা। তারই ফলে আখেরে ঘরগুলি সবসময়ই শীতল বাতাসযুক্ত থাকে। এছাড়াও বাড়িটি যাতে টেকসই হতে পারে, তার জন্য এক বিশেষ প্রকারের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে, রয়েছে সৌর প্যানেলও।
এই বাড়ির তাপমাত্রা কখনও 10 ডিগ্রির নিচে নামে না। বুঝতে পারছেন, এই গ্রীষ্মের স্বৈরাচারিতা থেকে কতটা স্বস্তিদায়ক সে বাড়ি, যেখানে একটাও এয়ার কন্ডিশনার নেই। এমনকি গরম যদি মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় অর্থাৎ বাইরের তাপমাত্র 45-48 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডও হয়ে যায়, তাহলেও এই বাড়ির তাপমাত্রা কখনই 20-25 ডিগ্রির উপরে ওঠে না। প্রাণ ওষ্ঠাগত গরমে এই বাড়ির তাপমাত্রা হিমশীতল রাখার পুরো ক্রেডিটটাই নিয়ে নেবেন আর্কিটেক্ট সমীরা।