এসি (AC) থেকে শুরু করে ফ্রিজ (Fridge), মাইক্রোওয়েভ, ওয়াশিং মেশিন-সহ যে সব ইলেকট্রনিক প্রডাক্টগুলি ক্রয় করতে গিয়ে আপনি পিছ পা হন, সেগুলিই এবার সস্তা (Cheaper) হতে চলেছে। সংবাদমাধ্যম বিজ়নেসইনসাইডার-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, সংস্থাগুলি উৎসবের মরশুমে ইনপুট খরচ হ্রাস করতে চলেছে। যার ফলে এসি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ, ওয়াশিং মেশিনের মতো যে প্রডাক্টগুলি ক্রয় করতে আপনাকে রীতিমতো ছেঁকা খেতে হত, সেগুলিই অনেকটা সস্তা হবে।
কপার, স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ম- এই সেক্টরে যে কাঁচামালগুলির প্রয়োজন হয়, সেগুলির দাম গত তিন মাসে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ার পর হালফিলে কিছুটা হলেও কম করা হয়েছে। এখন এই দাম হ্রাস হওয়ার ফলে প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির খুব সুবিধা হয়েছে। বাজাজ ইলেকট্রিক্যালস, ব্লুস্টার, ক্রম্পটন, হ্যাভেলস, ভোল্টাস এবং ওয়ার্লফুল-এর মতো সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে কাঁচামাল ক্রয় করার বিষয়টি আগের থেকে অনেকটাই লাভজনক হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসের দামের তুলনায় এখন কপার 21%, স্টিল 19% এবং অ্যালুমিনিয়াম 36% হয়েছে, ICICI সিকিওরিটিজ়ের একটি রিপোর্ট থেকে এমনই তথ্য জানা গিয়েছে। দুই বছর আগে কোভিড 19 অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকে গ্রাহকরা এইসব গৃহস্থালির টেকসই জিনিসপত্রের উপর 20% অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে আসছেন, এর সঙ্গে এই কোম্পানিগুলির মার্জিন বৃদ্ধি পাবে।
ব্রোকারেজ ফার্মটি আরও যোগ করে বলছে, “ইনপুট মূল্যের সংশোধনের সঙ্গে দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমেছে। আমরা বিশ্বাস করি যে, কোম্পানিগুলো এই সেগমেন্টের একাধিক প্রডাক্টের দাম বাড়িয়েছে, যা সত্যিই অপরিহার্য ছিল। ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধি গত দুই বছরে 20% এর বেশি ছিল।”
তাহলে দাম কি আদৌ কমবে?
ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। তবে, এটি কেবল টেকসই শিল্পে একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। তবে তার আগে কোম্পানিগুলি সস্তার কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত নতুন আইটেম বিক্রি করার আগে তাদের পুরানো স্টক ক্লিয়ার করতে চাইবে। ফলে, এখনই দাম কমার সম্ভাবনা এখনই খুব একটা নেই। তবে অদূর ভবিষ্যতে দাম কমার সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং সেই রাস্তাটাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। এখন কোম্পানিগুলি কখন থেকে দাম কমাতে পারে, তার উত্তর একমাত্র তাদের কাছেই রয়েছে।
ICICI সিকিওরিটিজ় বিশ্বাস করে, বর্ধিত মার্জিন এসি, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ এবং ওয়াশিং মেশিনের নির্মাতাদের তাদের বিজ্ঞাপনের প্রচেষ্টা বাড়াতে এবং গ্রাহককে আরও ভাল ছাড় দিতে বাধ্য করবে। বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ করে উৎসবের মরসুম আর মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকায় গ্রাহকের ক্ষেত্রে বিষয়টি খুবই সুবিধাজনক হতে চলেছে।
ICICI-এর ওই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা টেকসই কোম্পানির মডেল করি না যাতে তারা সমস্ত সুবিধা পকেটে রাখতে পারে এবং তাদের লাভ থেকে বিনিয়োগেরও আশা করা যায়। কোম্পানিগুলি যে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে, তার মধ্যে একটি হল বিজ্ঞাপন। কারণ, বিজ্ঞাপন-ব্যয় গত তিন বছর ধরে অনেকটাই কম রয়ে গিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সংস্থাগুলি তাদে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে ব্যয় বাড়াতে পারে এবং নতুন পণ্যের একটি পরিসরও চালু করতে পারে। পাশাপাশি তাদের ট্রেড স্কিম এবং ডিসকাউন্টও বাড়বে আগের থেকে অনেকটাই। ICICI-এর ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মার্কেট শেয়ার অর্জনে সরাসরি দাম কমানোর থেকে উপভোক্তাদের জন্য অফার নিয়ে আসার প্রচেষ্টাই করবে কোম্পানিগুলি।
তবে এই শিল্পের উৎপাদনে এবং সর্বোপরি প্রডাক্টের দাম কমানোর বিপরীতে আর একটি যে বিষয় কাজ করছে, তা হল অপরিশোধিত তেলের দাম যা 2022 সালের বেশির ভাগ সময় ধরে $100/এক ব্যারেল স্তরের উপরে ছিল। আর তেলের দাম বাড়ার কারণেই এই সাদা পণ্য ও টেকসই কোম্পানিগুলি বা হোয়াইট গুডস অ্যান্ড ডিউরেবল কোম্পানিগুলিকে তাদের বিভিন্ন পণ্যের দাম কিছুটা বাধ্য হয়েই বাড়াতে হয়।