হালফিলে বাইরে বেরিয়ে ভিড়েঠাসা অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কেনাকাটির জন্য আমাদের একটাই অপশন – অনলাইন শপিং (Online Shopping)। কখনও জামাকাপড়, কখনও বা ইলেকট্রনিক্স প্রডাক্ট কিনতে আমার শরণাপন্ন হচ্ছি বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের। সস্তা বা দামি সবই কিনছি সমানতালে। কিন্তু ঠকছি না তো? অনলাইনে একটা মোটা টাকার জিনিস কেনার পরে আমাদের হাহুতাশ করতে হচ্ছে না তো? তার থেকেও বড় কথা হল, অনলাইন শপিংয়ের গোঁড়ার কথা জেনেই আমরা কেনাকাটি করছি কি? অনলাইনে কেনাকাটির ব্যাকরণটা কি আমাদের জানা? হয়তো আমরা অনেক বেশি কিছুই জানি, কিন্তু বেসিকটাই জানি না। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন, জিনিসপত্র কেনাকাটির সময় দুটো শব্দ আমরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে খুব শুনতে পাই – ওয়ারেন্টি (Warranty) এবং গ্যারান্টি (Guarantee)। কাস্টমাররা কী চান? তাঁরা চান, একটা প্রডাক্ট কেনার পর যেন বারংবার সার্ভিসিং না করাতে হয়। আর একান্তই যদি তা করাতেও হয়, তাহলে যেন বেশি ঝক্কি পোহাতে না হয়। অনলাইনে বা এমনিতেও কোনও একটা জিনিস কেনার পর আপনাকে বেশি ঝক্কি পোহাতে হবে না, যদি আপনি ওয়ারান্টি আর গ্যারান্টির সহজ ফারাকটা জেনে নেন। আসুন, ওয়ারেন্টি কী আর গ্যারান্টিই বা কী, আর কী-ই বা তাদের পার্থক্য, তাই একবার জেনে নেওয়া যাক।
গ্যারান্টি কী
গ্যারান্টি শব্দটা সম্পর্কে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। প্রডাক্টের রিটেল বক্সে যেমন ৬ মাস বা ১ বছর বা তারও বেশি গ্যারান্টির কথা মোটা মোটা অক্ষরে লেখা থাকে। তেমনই আবার বিক্রেতাকে বারবার এই গ্যারান্টি শব্দটা আওড়াতে শোনা যায়। তা কী এই গ্যারান্টি। খুব সহজ ভাবে বলতে গেলে, গ্যারান্টি হল কোনও প্রডাক্টে কোনও ত্রুটিবিচ্যুতি দেখা গেলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা কোনও অতিরিক্ত চার্জ ছাড়াই সারিয়ে দেওয়া হয়। সেই নির্ধারিত সময় সীমাকেই বলা হয় গ্যারান্টি পিরিওড। বিভিন্ন প্রডাক্টের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম গ্যারান্টি পিরিওড থাকে। কখনও তা ৬ মাস, কখনও ১ বছর, কখনও আবার তার থেকে বেশি। গ্যারান্টির সময় সীমায় নির্দিষ্ট প্রডাক্টের যদি কোনও ম্যানুফ্যাকচারিং সংক্রান্তও সমস্যা থাকে, তাহলে সেটিকেও ফিরিয়ে সমাধান করে দেয় কোম্পানি। তার বদলে ক্রেতাকে দেওয়া হয় এক্কেবারে নতুন প্রডাক্ট।
ওয়ারেন্টি কী
ওয়ারেন্টি হল কোনও প্রডাক্ট একবার বিক্রি করার পরে কোম্পানি তা কোনও মতেই ফিরিয়ে নেবে না। তা সেই প্রডাক্টে যত ত্রুটিই থাকুক না কেন। তবে সেই প্রডাক্টটি ওয়ারেন্টি পিরিওডে থাকার সময় সেটিতে কোনও ত্রুটি দেখা যায়, তাহলে তা সারিয়ে দেওয়ার দায়িত্বভার নেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। তাতে কোনও ছোট বা বড় পার্টস লাগিয়ে দেওয়ার কাজ হোক বা অন্য কোনও কাজ, সেই কাজগুলি কোম্পানি বিনা খরচেই করে দেয়, যাতে কাস্টমারের সমস্যা না হয়। কোনও প্রডাক্টে যদি ওয়ারেন্টি শব্দটি লেখা থাকে, তাহলে কোম্পানি কেবল মাত্র সেই প্রডাক্ট ওয়ারেন্টি পিরিওডে থাকাকালীন অবস্থায় সারিয়ে দেবে। এর বেশি আর কিসসু না। কোনও ভাবেই সেই প্রডাক্ট বদলে দেওয়া হবে না।
গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি লেখা প্রডাক্ট কেনার সময় যে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন
গ্যারান্টি এবং ওয়ারেন্টির পার্থক্যটা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন। একটায় যেখানে আপনার ত্রুটিপূর্ণ প্রডাক্ট বদলে দেওয়া হতে পারে, আর একটায় স্রেফ সেটিকে সারিয়ে দেওয়া হতে পারে। তবে উভয় শর্তই জিনিসপত্র কেনাকাটির জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তবে ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি লেখা কোনও প্রডাক্ট কেনার আগেও কয়েকটা জিনিস আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে –
১) উভয় ক্ষেত্রেই আপনার কেনা পণ্যের জন্য যেন একটি বিল থাকে।
২) সেই বিলে যেন পণ্যটি ক্রয়ের তারিখ, তার মূল্য এবং সম্পূর্ণ নাম সবিস্তারে লেখা থাকে।
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটির ক্ষেত্রে একটা সুবিধা হল, তার অনলাইন বিল। আপনি কোনও জিনিস কেনার সময় অনলাইন বিল থাকলে তার পুরো ডেটাবেস কোম্পানির কাছে থেকে যায়। আর এই সব বিষয়গুলি আপনি খেয়াল রাখলে অনলাইনে দামি জিনিস কেনার পর আর আপনাকে ঠকতে হবে না, বেশি ঝক্কিও পোহাতে হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, আপনি যে প্রডাক্টই কিনুন না কেন, তা যদি আগুনে পুড়ে যায় বা জলে ডুবে যায়, তাহলে কোনও ভাবেই আপনি ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টির কিছুই পাবেন না। তা যদি নির্দিষ্ট পিরিওডের মধ্যেও থাকে, তাহলেও পাবেন না।