Noida Twin Towers: ধ্বংসের আগে নয়ডার যমজ টাওয়ারে বসানো হয় সিজ়মোগ্রাফ, কয়েকটা কালো বাক্স, ড্রোন, থার্মাল ইমেজ ক্যামেরা, রোমহর্ষক প্রযুক্তির কারিকুরি

TV9 Bangla Digital | Edited By: সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়

Aug 30, 2022 | 3:31 PM

Noida Twin Towers Demolition: নয়ডার যমজ টাওয়ার ভেঙে ফেলার কাজে যে আদ্যোপান্ত আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু বিল্ডিং দুটি ভেঙে ফেলার আগে গবেষণার কাজে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছিল, সেই কাহিনিই কম রোমহর্ষক নয়।

Noida Twin Towers: ধ্বংসের আগে নয়ডার যমজ টাওয়ারে বসানো হয় সিজ়মোগ্রাফ, কয়েকটা কালো বাক্স, ড্রোন, থার্মাল ইমেজ ক্যামেরা, রোমহর্ষক প্রযুক্তির কারিকুরি
বিরাট অট্টালিকাকে মুহূর্তে ধুলোয় মেশানোর নেপথ্য কারিগর যারা।

Follow Us

Gadgets Placed In Noida Twin Towers: একটা বাটন প্রেস…বিপ…বিপ…বিপ…সব শেষ! নয়ডায় যমজ টাওয়ারের ধ্বংসলীলা দেখে চমক গিয়েছে দেশ। কিন্তু সেই সহজ বাটন প্রেসে টুইন টাওয়ারের ধ্বংসলীলার নেপথ্যে যে যজ্ঞলীলা রয়েছে তাই সবথেকে বেশি রোমহর্ষক। জোড়া টাওয়ারকে মাটিতে মেশাতে প্রযুক্তির যে ব্যাপক ভাবে সাহায্য নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু কী প্রযুক্তি? কীভাবেই বা এত বড় দুটো টাওয়ারকে প্রযুক্তিনির্ভর উপায়ে ধূলিসাৎ করা হল? সোমবার CBRI-এর একজন সিনিয়র সায়েন্টিস্ট জানিয়েছেন যে, সুপারটেক টুইন টাওয়ারের ধ্বংসলীলার গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল হাই-টেক সিজ়মোগ্রাফ, কিছু কালো বাক্স, এয়ারক্রাফ্টের সাউন্ড রেকর্ডের জন্য একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস। এগুলির সবই ওই জোড়া বিল্ডিংয়ের ভিতরে ফিট করা হয়েছিল। পাশাপাশি গবেষণার সাহায্যার্থে ছবি ও ভিডিয়ো তোলার কাজে যে ড্রোনগুলি ঘোরাফেরা করছিল, তাদের ভিতরে ছিল থার্মাল ইমেজ ক্যামেরা।

নয়ডার সেক্টর 93A-র 100 মিটার লম্বা অবৈধ সুপারটেক বিল্ডিং ভেঙে ফেলার জন্য প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ দল হিসেবে সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (CBRI)-কে নিযুক্ত করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এই CBRI আবার মুম্বইয়ের এডিফাইস ইঞ্জিনিয়ারিংকে বেছে নিয়েছিল, যারা চোঁখধাঁধানো প্রক্রিয়ার অবলম্বন করে ‘জলপ্রপাতের বিস্ফোরণ’ দ্বারা বিল্ডিংগুলিকে নিরাপদে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। এতটাই নিরাপদে সমগ্র কাজটি সম্ভব হয়েছে যে, জোড়া টাওয়ার দ্বয়ের নয় মিটারের কাছাকাছি ভবনগুলির কাঠামোগত কোনও ক্ষতি হয়নি। এছাড়াও স্থল কম্পনের জন্য সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ মাইনিং অ্যান্ড ফুয়েল রিসার্চ (CIMFR)-কে নিযুক্ত করেছিল CBRI।

নয়ডার ওই টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল ধানবাদ ও বিলাসপুরের CIMFR দলের সদস্যরা। CBRI-এর সিনিয়র প্রিন্সিপাল সায়েন্টিস্ট ডক্টর দেবীপ্রসাদ কানুনগো সংবাদমাধ্যম PTI-এর কাছে বলেছেন, “এটিএস ভিলেজ এবং এমারেল্ড সোসাইটির কাছাকাছি আবাসিক টাওয়ারগুলিতে কাঠামোগত কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঘটনার সময়ে কেবল এএটিএস ভিলেজের একটি কম্পাউন্ড ওয়াল ছাড়া কয়েকটি জানলার কাঁচ ভেঙে গিয়েছিল। ওই সুপারটেক বিল্ডিং দুটির ধ্বংস-পরবর্তী স্ট্রাকচারাল অডিট চেয়েছি আমরা। সেটা একবার হয়ে গেলেই তার ফলাফল আমাদের বিল্ডিং দুটির ধ্বংস বিশ্লেষণে আরও সাহায্য করবে।”

এদিকে বিল্ডিং দুটি ধ্বংসের আগে গবেষণা কাজে সহযোগিতার জন্য জেট ডেমোলিশনস এবং এডিফিস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল CBRI। উভয় গ্রুপই অধ্যয়ন এবং গবেষণার স্বার্থে একে অপরের সঙ্গে ডেটা শেয়ার করবে, এই মর্মেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেই চুক্তি। যে ডক্টর কানুনগো টুইন টাওয়ার ধ্বংসকারী দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি জানিয়েছেন, বিল্ডিং দুটির ভিতরে বেশ কিছু উচ্চ প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম এবং যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছিল, যা তাঁদের ভবিষ্যতে গবেষণার কাজে খুবই উপযোগী হবে।

PTI-এর কাছে ওই সিনিয়র সায়েন্টিস্ট বলেছেন, “আমাদের কাছে মোট 19টি সিজ়মোগ্রাফ ছিল। এগুলি হাই-এন্ড এবং উচ্চস্তরের প্রযুক্তিগত সিজ়মোগ্রাফ যেগুলি টুইন টাওয়ার থেকে 150 মিটার রেঞ্জে ইনস্টল করা হয়েছিল। কিছু সরঞ্জাম আবার টুইন টাওয়ারের বেসমেন্টে স্থাপন করা হয়েছিল। পাশাপাশি দুটি ভবনেরই কম্পনের মাত্রা পাওয়ার সুবিধার্থে কিছু সরঞ্জাম বিভিন্ন মেঝেতেও স্থাপন করা হয়েছিল।”

ডক্টর কানুনগোর কথায়, “দুটি টাওয়ারে পাঁচটি করে মোট 10টি কালো বাক্স বসিয়েছিলাম আমরা। এটা ছিল CBRI-এর আইডিয়া। আমরা বেশ কয়েকটি ড্রোন এবং থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরাও ব্যবহার করেছিলাম, যেগুলি আমাদের কিছু ছবি তুলে নিয়ে আসতে সাহায্যে করেছে পরবর্তী স্তরের গবেষণার জন্য। এই সব সরঞ্জাম এবং যন্ত্রগুলি থেকে সংগৃহীত তথ্য ভবিষ্যতে আমাদের এ বিষয়ে অধ্যয়ন, ধ্বংস এবং নির্মাণ-সম্পর্কিত গবেষণার কাজে সাহায্য করবে। এছাড়াও ভবনগুলির মধ্যে কম্পনের গতিবিধি রেকর্ড ও অধ্যয়নের কাজে আমরা জিওফোনের মতো যন্ত্রেরও ব্যবহার করেছিলাম।”

থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা হল এমনই ডিভাইস যা ইনফ্রারেড বিকিরণ ব্যবহার করে ছবি তৈরি করে। ঘন ধোঁয়া এবং ধুলোয় নিমজ্জিত লোকজনকে সনাক্ত করতে আগুন ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলা কার্যক্রমে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয় এই অসাধারণ ডিভাইস।

ধ্বংসের সময় গ্রাউন্ড ভাইব্রেশন রিপোর্ট সম্পর্কে CBRI-এর এই আধিকারিক বলছিলেন, “ফলাফল জানতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে। এডিফিস এবং জেট ডেমোলিশন দ্বারা স্থাপন করা এই ডিভাইসগুলির মাধ্যমে ধ্বংসলীলার সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে রেকর্ডিং করা হয়েছে। একবার তা বিশ্লেষণ করা হলে আমাদের অনেক সাহায্য করবে। স্থল কম্পন, বিল্ডিং নির্মাণ ইত্যাদি সম্পর্কিত ভবিষ্যতের গবেষণা সম্পর্কেও দ্বারোদঘাটন করবে।”

ভারতে এখনও পর্যন্ত ইমপ্লোশন কৌশল দ্বারা ভেঙে ফেলা সবচেয়ে উঁচু এবং অবৈধ নির্মাণ ছিল নয়ডার এই টুইন টাওয়ার। এর আগে 2020 সালে কেরালার কোচির মারাদু পৌর এলাকায় 18-20 তলার চারটি আবাসিক কমপ্লেক্স বিস্ফোরণের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই বিল্ডিং ধূলিসাৎ করার কাজটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে হয়েছিল। কারণ, এই ভবনগুলি বিল্ডিং নির্মাণের আইন লঙ্ঘন করে নির্মিত হয়েছিল।

Next Article