দেশের মানুষের বিদেশ ভ্রমণ আরও সুরক্ষিত করতে বিশেষ সুবিধা নিয়ে আসছে ভারত সরকার। পাসপোর্ট হোল্ডারদের সমস্ত তথ্য নিরাপদে রাখতে ই-পাসপোর্ট (E-Passport) নিয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্র। গত বছরই কেন্দ্রের তরফে ই-পাসপোর্ট পরিষেবা নিয়ে আসার ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর (S Jaishankar) শুক্রবার জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ থেকেই চিপ-ভিত্তিক ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন দেশবাসী। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও দাবি করেছেন, ভারত সরকারের লক্ষ্য ‘নাগরিক অভিজ্ঞতা ও পাবলিক ডেলিভারি’ আগের থেকে আরও উন্নত করা।
এস জয়শঙ্করের কথায়, “পাসপোর্ট সেবা দিবস 2022 উপলক্ষ্যে ভারতে এবং বিদেশে আমাদের সমস্ত পাসপোর্ট ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগ দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা এই বছরের 24শে জুন পাসপোর্ট সেবা দিবস উদযাপন করার সময় পরবর্তী স্তরের নাগরিক অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতির দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছি।”
চিপ-ভিত্তিক ই-পাসপোর্ট পরিষেবা কিন্তু নতুন নয়। এই মুহূর্তে 100-রও বেশি দেশ তার নাগরিকদের ই-পাসপোর্ট অফার করে। সেই তালিকায় রয়েছে, আয়ারল্যান্ড, জ়িম্বাবোয়ে, মালাওয়াই, এমনকী, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশেও চিপ-ভিত্তিক ই-পাসপোর্ট চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কী এই ই-পাসপোর্ট? কীভাবে এই পরিষেবা আপনার ভ্রমণ সহজ এবং সুরক্ষিত করবে? চিপ-ভিত্তিক ই-পাসপোর্ট সম্পর্কিত সব তথ্য এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
ই-পাসপোর্ট কী
দেশে ইতিমধ্যেই যে ফিজ়িক্যাল পাসপোর্ট রয়েছে, তার মতোই কাজ করে ই-পাসপোর্ট। তবে এর ভিতরে থাকে একটি ছোট্ট ইলেকট্রনিক চিপ, যা অনেকটাই ড্রাইভারের লাইসেন্সের মতো। পাসপোর্টের ভিতরে যে চিপটি থাকবে, সেটি ইউজারদের সমস্ত জরুরি তথ্য স্টোর করে রাখবে। সেই সব তথ্যের মধ্যে রয়েছে – নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা-সহ আরও একাধিক বিষয়।
এই ই-পাসপোর্টগুলি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) চিপ ব্যবহার করে এবং ইনলে হিসেবে ব্যাক কভারে এমবেড করা থাকবে একটি অ্যান্টেনা। এই চিপের মাধ্যমেই একজন ট্রাভেলারের যাবতীয় তথ্য খুব সহজে ভেরিফাই করতে পারবেন এয়ারপোর্টের কর্মকর্তারা। তবে ই-পাসপোর্ট অর্থাৎ চিপ-ভিত্তিক পাসপোর্ট রোল আউট করার পিছনে মূল লক্ষ্য হল ভুয়ো পাসপোর্টের রমরমা কমানো। পাশাপাশি, এর মাধ্যমে যাত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি একদিকে যেমন সুনিশ্চিত হবে, তেমনই আবার আর এক দিকে ডুপ্লিকেশন এবং ডেটা ট্যাম্পারিংয়ের হারও কমানো সম্ভব হবে।
ই-পাসপোর্ট কারা তৈরি করবে
টেক জায়ান্ট টাটা কনসাল্টেন্সি সার্ভিস (TCS) এই ই-পাসপোর্ট নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং চলতি বছরের শেষ দিকেই এই পরিষেবা ভারতে চালু হয়ে যাবে। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই এই বিষয়টা নিশ্চিত করে জানিয়েছে। একাধিক রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, প্রকল্পের সমস্ত ব্যাকএন্ড সাপোর্টের জন্য TCS, বিদেশ মন্ত্রকের (MEA) সঙ্গে একটি নতুন কমান্ড, নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং একটি নতুন ডেটা সেন্টার স্থাপন করবে বলে জানা গিয়েছে।
ই-পাসপোর্ট কবে রোল আউট করবে
বিদেশমন্ত্রী নিশ্চিত বার্তা দিয়ে বলছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে ই-পাসপোর্টের বাস্তব রূপায়ণ সম্ভব হবে। যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এখনও পর্যন্ত ভারতে ই-পাসপোর্ট চালু করার আনুষ্ঠানিক দিন সম্পর্কে ঘোষণা করেননি।
যাঁদের কাছে পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদের কি আপগ্রেড করার দরকার রয়েছে
যাঁদের কাছে ইতিমধ্যেই পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদের ই-পাসপোর্টে আপগ্রেড করাতে হবে কি না, সে বিষয়ে ভারত সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি। তবে ফিজ়িক্যাল পাসপোর্টের মতোই ই-পাসপোর্টের আবেদনও একই হতে চলেছে বলে খবর। নতুন যাঁরা আবেদনকারী হবেন, তাঁরা দেশে ই-পাসপোর্ট পরিষেবা চালু হওয়ার পর সরাসরি আবেদন করতে পারবেন।
ই-পাসপোর্ট কেমন দেখতে হচ্ছে
বিশ্বের অন্যান্য দেশে ই-পাসপোর্ট দেখতে সাধারণ পাসপোর্টের মতোই। কেবল তার ভিতরে একটি চিপ ইনস্টল করা থাকবে।