2022 সালে এই পৃথিবী মারাত্মক গ্রীষ্মের সম্মুখীন হয়েছিল। পরিসংখ্যান বলছে, ফেলে আসা বছরটায় এতটাই গরম ছিল যে, তা 2015 সালের রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। আর সেই রেকর্ড করা গরমের পরিসংখ্যান থেকেই 2022 সালকে পঞ্চম উষ্ণতম বছর হিসেবে সেট করা হয়েছে। তার থেকেও ভয়ঙ্কর বিষয়টি হল, 1901 সালের পর থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে এটিই ছিল পঞ্চম উষ্ণতম বছর। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ‘আশঙ্কাজনক’।
নিউইয়র্কে নাসা গডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, 2022 সালে গ্লোবাল টেম্পারেচার ছিল 1.6 ডিগ্রি ফারেনহাইট (0.89 ডিগ্রি সেলসিয়াস), যা নাসার বেসলাইন পিরিয়ডের (1951-1980) গড় তাপমাত্রার থেকে অনেকটাই বেশি ছিল। এ বিষয়ে নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলছেন, “উষ্ণতা বৃদ্ধির এহেন প্রবণতা খুবই বিপজ্জনক। জলবায়ু ক্ষেত্রে বিশ্ব উষ্ণায়ন ইতিমধ্যেই ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। দাবানল আগের থেকে আরও তীব্র হচ্ছে, শক্তিশালী হচ্ছে হ্যারিকেন, খরা সর্বনাশ করছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে।”
উনিশ শতকের শেষের দিকের গড় তাপমাত্রার থেকে 2022 সালে প্রায় 2 ডিগ্রি ফারেনহাইট (বা প্রায় 1.11 ডিগ্রি সেলসিয়াস) বেশি উষ্ণ ছিল পৃথিবী। “জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এবার আমাদের সিরিয়াসলি ভাবনাচিন্তা করার সময় এসে গিয়েছে,” যোগ করলেন নেলসন। তিনি আরও বললেন, “আমাদের আর্থ সিস্টেম অবজারভেটরি, জলবায়ু মডেলিং, বিশ্লেষণ এবং সে সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলিকে সাপোর্ট করার জন্য অত্যাধুনিক ডেটা সরবরাহ করবে, যা মানবজাতিকে আমাদের গ্রহের পরিবর্তিত জলবায়ু মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।”
কোভিড অতিমারির কারণে খুব অল্প পরিমাণে পতনের পর 2020 সালে মানব-চালিত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন আবার বেড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি, নাসার বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করেছেন যে, 2022 সালে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের রেকর্ড সর্বোচ্চ ছিল। পৃথিবীর পৃষ্ঠের খনিজ ধূলিকণার উৎসের অনুসন্ধান যন্ত্র ব্যবহার করে, মিথেনের কিছু সুপার-এমিটার এবং আর একটি শক্তিশালী গ্রীনহাউস গ্যাসকে শনাক্ত করেছে NASA, যা গত বছর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে চালু করা হয়েছিল।
জলবায়ু মডেলিংয়ের জন্য নাসার প্রধান কেন্দ্র জিআইএসএস-এর পরিচালক গ্যাভিন শ্মিড্ট বলেছেন, “উষ্ণায়নের প্রবণতার সবথেকে বড় কারণ মানুষের কার্যকলাপ। এখন বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস থাকার ফলে তা পৃথিবীর জন্য আরও দুর্বিসহ হয়ে যাচ্ছে। ” আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের 2022 সালের বার্ষিক সভায় উপস্থাপিত একটি জিআইএসএস গবেষণার পাশাপাশি একটি পৃথক গবেষণা অনুসারে উষ্ণায়নের ফলে সবথেকে বেশি পরিমাণে প্রভাবিত হচ্ছে আন্টার্কটিকা। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের তুলনায় আন্টার্কটিকায় উষ্ণায়নের প্রভাব চার গুণ বেশি।
ব্যাপক হারের এই উষ্ণতা বৃদ্ধি যে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই জলবায়ু পরিবর্তনের দায় কে? যে শিশু কাল জন্ম নেবে, পরশু তাকে এই বিশ্বে বাসযোগ্য করে তুলতে পারব তো?