প্রতিদিন পৃথিবীর দিন ধীরে ধীরে দীর্ঘ হচ্ছে। তার কারণ, চাঁদও আমাদের থেকে দিনে দিনে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। প্রাচীনকালে এই পদ্ধতির অর্থাৎ পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়ার সামান্য বিরতি ঘটেছিল। জ্যোতির্পদার্থবিদদের একটি দল সম্প্রতি জানিয়েছে, প্রায় এক বিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রায় 2 বিলিয়ন এবং 600 মিলিয়ন বছর আগে চাঁদের মহাকর্ষীয় বল (gravitational force) যখন সূর্যের থেকে তৈরি হওয়া আর একটি শক্তির দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল, তখনই ঘটেছিল এই ঘটনা।
আসলে, সূর্যের বায়ুমণ্ডলীয় জোয়ার চন্দ্রের প্রভাবের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। আর সেই ঘটনার দ্বারা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল যে, পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিও স্থির থাকে এবং সেই অনুযায়ী দিনের দৈর্ঘ্য 19.5 ঘণ্টা স্থির থাকে। এখন গবেষকরা দাবি করছেন, এই বিঘ্ন যদি না ঘটত তাহলে পৃথিবীর দিন বর্তমানে 24 ঘণ্টা দীর্ঘ এবং 60 ঘণ্টা পর্যন্ত প্রসারিত হত।
গবেষণা দলটি প্রমাণ করেছে যে, গ্রহের বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা এবং পৃথিবীর ঘূর্ণন হারের ফলে সূর্য এবং চাঁদের মধ্যে জোয়ারে একটা স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্সেস প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, দলটি ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখেছে এবং উপসংহারে পৌঁছনোর জন্য তাঁরা বায়ুমণ্ডলীয় গবেষণা সরঞ্জাম ব্যবহার করেছেন।
চাঁদ কীভাবে পৃথিবীর গতি কমিয়ে দেয়?
লক্ষ্যণীয় বিষয়টি হল, চাঁদ যখন প্রাথমিক ভাবে গঠিত হয়েছিল তখন পৃথিবীর দিন মাত্র 10 ঘণ্টার জন্য স্থায়ী ছিল। অর্থাৎ পৃথিবীতে একটা দিন মানে তা 10 ঘণ্টার জন্য স্থায়ী। কিন্তু ধীরে ধীরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে চাঁদ তার অক্ষের উপরে গ্রহের ঘূর্ণনের গতি ধীর করে দেয়। তার ফলেই দিন আরও প্রসারিত হয়ে আস্তে আস্তে 24 ঘণ্টায় পৌঁছে যায়। গবেষকরা আগেই জানিয়েছিলেন, প্রতি শতাব্দীতে চাঁদ প্রায় 1.7 মিলিসেকেন্ড হারে দিনকে প্রসারিত করতে থাকে।
মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর বিরুদ্ধে চাঁদের সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে কাজ করে। মহাসাগরের উপর একটি টান প্রয়োগ করার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর ঘূর্ণনকে হ্রাস করে, যার ফলে গ্রহের বিপরীত দিকে জোয়ারের স্ফীতি থেকে উচ্চ ও নিম্ন জোয়ারের সৃষ্টি করে। পৃথিবীর বিপরীত প্রান্তের এই জোয়ার এবং সমুদ্রের তলের মধ্যে ঘর্ষণের সঙ্গে মিলিত এই স্ফীতির উপরে চাঁদের মহাকর্ষীয় আকর্ষণ আমাদের ঘূর্ণায়মান গ্রহে একটি স্পিডব্রেকার হিসেবে কাজ করে। এর কারণেই আখেরে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি কমে যায়।
জ্যোতির্পদার্থবিদ নরম্যান মারে যিনি এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্যাখ্যা করে বলছেন, “সূর্যের আলো এই ধরনের স্ফীতির সঙ্গে একটি বায়ুমণ্ডলীয় জোয়ারের সৃষ্টি করে। সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ এই স্ফীতিকে প্রভাবিত করে এবং তার ফলে পৃথিবীতে একটি টর্ক তৈরি হয়। তবে চাঁদের ঠিক উল্টো দিকে গিয়ে এই প্রক্রিয়াটি পৃথিবীর ঘূর্ণন কমানোর পরিবর্তে তাকে ত্বরান্বিত করে।”