Microraptor: ডাইনোসররা সব প্রাণীদেরই ডরাত, মেরে খেয়ে ফেলত। আমরা তা পড়েছি, জুরাসিক পার্ক ছবিতে দেখেছি। কিন্তু গবেষকরা এতদিন প্রমাণ করতে পারেননি যে, ডাইনোসররা কোনও স্তন্যপায়ী প্রাণীকে খেয়েছিল। ব্রিটেনের একদল প্যালিওন্টোলজিস্ট সম্প্রতি এমনই প্রমাণ পেয়েছেন। প্রায় 100 মিলিয়ন বছর আগের জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে ওই প্যালিওন্টোলজিস্টরা বলছেন, তাঁরা সম্ভবত প্রথম কোনও ডাইনোসরের সন্ধান পেয়েছেন, যার শরীরে স্তন্যপায়ী প্রাণীর অবশেষ মিলেছে। এই জীবাশ্মটি একটি ছোট্ট পালকযুক্ত ডাইনোসরের, যাদের মাইক্রোর্যাপ্টার বলা বয়। এই ধরনের ডাইনোসরের পাঁজরের ভিতরে একটি প্রাণীর পা মিলেছে।
গত মঙ্গলবার জার্নাল অফ ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজিতে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে জানা গিয়েছে, ডাইনোসরটি একটি ইঁদুরের আকারের স্তন্যপায়ীকে আক্রমণ করেছিল, যা মাটিতে বসবাস করত কিন্তু মোটেই পর্বতারোহী ছিল না। যদিও মাংসাশী ডাইনোসরদের জন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন প্রাণীর শিকার করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এই ঘটনাটি অবশ্য প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে আলোকপাত করে। এর আগের একাধিক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছিল যে, তিন আঙুলের মাইক্রোর্যাপ্টার অনেকটাই বিড়াল বা কাকের মতো দেখতে হত। পশ্চিম চিনে আবিষ্কৃত এগুলিই ছিল প্রথম মাংসাশী ডাইনোসর।
মাইক্রোর্যাপ্টারদের অস্তিত্ব ছিল 125 থেকে 113 মিলিয়ন বছর আগে। এরা মূলত দুই পায়ে হাঁটত। তবে গবেষকরা বিশ্বাস করেন, সামান্য গাইড করলে এরা উড়তেও পারত। গবেষকরা যে জীবাশ্মটির সন্ধান পেয়েছেন, তার শরীরের অনেক অংশই অনুপস্থিত ছিল। তবে পাঁজরের খাঁচাটি দৃশ্যমান ছিল। তার ভিতরেই একটি ছোট্ট পা ছিল, যা আকারে আধ ইঞ্চিরও কম এবং তা পুরোপুরিভাবে সংরক্ষিত ছিল।
এই গবেষণার প্রধান লেখক এবং লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওন্টোলজিস্ট ডঃ ডেভিড হোন বলছেন, “ডাইনোসরের অভ্যন্তরে খাবারের সন্ধান পাওয়া খুবই বিরল ঘটনা। তাই প্রত্যেকটি উদাহরণ সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা কী খেত, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ একমাত্র এখান থেকেই মিলতে পারে।”
ওই প্যালিওন্টোলজিস্ট আরও উল্লেখ করেছেন, “যদিও এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটি একেবারেই মানুষের পূর্বপুরুষ ছিল না। তবে এদের দেখে আমরা আমাদের কিছু প্রাচীন আত্মীয়দের ক্ষুধার্ত ডাইনোসরদের খাবার হিসেবে দেখতে পারি।” তবে স্তন্যপায়ী প্রাণীটি ছোট ইঁদুরের মতো হলেও মাইক্রোর্যাপ্টাররা এক্কেবারে ক্ষুদ্রতম ডাইনোসরের অন্তর্গত। প্রায় দুই দশক আগে এই ধরনের ডাইনোসরের প্রজাতি সম্পর্কে প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল।
যদিও এই জীবাশ্মটির সন্ধানও বহু দিন আগেই মিলেছিল। কিন্তু প্রথম বার জীবাশ্মটি বিশ্লেষণ করে ইঁদুরের পায়ের সন্ধান মেলেনি। পরবর্তীতে জীবাশ্মটি পুনরায় বিশ্লেষণ করেই ওই মাইক্রোর্যাপ্টারের পাঁজরের খাঁচায় ইঁদুরের পা দেখা যায়, যা যুগান্তকারী বলেই দাবি করছেন গবেষকরা।