আমাদের অস্তিত্ব ততক্ষণই আছে, যতক্ষণ বাতাসে অক্সিজেন আছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের 21 শতাংশ জুড়ে থাকা অক্সিজেন অসংখ্য প্রজাতির বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এই মাত্রা সবসময় এক ছিল না। 4.5 বিলিয়ন বছর আগে যখন পৃথিবী গঠিত হয়েছিল, তখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং জলীয় বাষ্পের প্রভাব তখন অনেক বেশি ছিল। এখন বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন যে, ভবিষ্যতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এমনই এক জায়গায় চলে আসবে, যেখানে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটাই কম।
2021 সালে Nature-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় সেই সময়কালের ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, সেই সময় এখনও এক বিলিয়ন বছর দূরে আছে। তবে যখন সেই বিরাট পরিবর্তন আসবে, তখন তা দাবানলের মতোই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এই শিফ্ট পৃথিবীকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবে যা প্রায় 2.4 বিলিয়ন বছর আগে গ্রেট অক্সিডেশন ইভেন্ট (GOE) নামে পরিচিত ছিল।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, 2021 সালের গবেষণা নিয়ে আবার নতুন করে তোলপাড়া কেন? একটাই কারণ। বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই সৌরজগতের বাইরে বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান করছেন। আর সেই সন্ধানের কাজের গতি যেন সম্প্রতি আরও বেড়ে গিয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে বাসযোগ্য বিশ্বের স্থায়ী বৈশিষ্ট্য হিসেবে বায়ুমণ্ডলীয় অক্সিজেনের থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ক্রিস রেইনহার্ড নিউ সায়েন্টিস্টের কাছে বলছেন, “অক্সিজেনের হার ব্যাপক হারে কমছে। এমনও একটা সময় আসবে, যখন আজকের তুলনায় প্রায় এক মিলিয়ন গুণ কম অক্সিজেনের কথা আমাদের বলতে হতে পারে।”
বিজ্ঞানীরা যাঁরা অন্তিম পরিস্থিতির ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, গবেষণায় তাঁরা বলেছেন, “মডেল প্রজেক্ট করেছিল যে, বায়ুমণ্ডলের ডিঅক্সিজেনেশন, বায়ুমণ্ডলীয় O2 আর্কিয়ান আর্থের স্তরে ব্যাপক ভাবে নেমে আসছে। খুব সসম্ভবত পৃথিবীর আর্দ্র গ্রিনহাউস অবস্থার সূচনা হওয়ার আগেই ডিঅক্সিজেনেশনের শুরু হবে এবং তা জলবায়ু ব্যবস্থা এবং বায়ুমণ্ডল থেকে ভূপৃষ্ঠের জলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আগেই।”
সূর্যের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রায় সংশ্লিষ্ট ড্রপের বিশ্লেষণ করে গবেষকরা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বিশদ মডেল তৈরি করেছেন। এখন কম কার্বন ডাই অক্সাইড মানেই উদ্ভিদের মতো কম সালোকসংশ্লেষণকারী জীবের হারও কমে যাওয়া। তার ফলে আক্ষরিকত অর্থেই বাতাসের অক্সিজেনের মাত্রা তলানিতে নামবে।