Human Stool Recycling Process: বাজার থেকে কিনে আনা শাকসব্জিগুলি, যেগুলি আপনি প্রতিদিন খান, সেগুলি আপনারই মল দিয়ে চাষ করা হয়েছে। শুনেই চোখ কপালে উঠল তো? ঘাবড়ে যাবেন না। দিনের পর দিন এমনটাই হচ্ছে। মাটিতে মেশা মলের থেকে ভাল সার আর কিছুই নেই, এমনটাই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আপনি কি জানেন একজন মানুষ বছরে গড়ে কতটা প্রস্রাব বা মল ত্যাগ করে? জানলে অবাক হবেন, একজন মানুষ বছরে প্রায় 500 কেজি মল এবং প্রায় 50 কেজি প্রস্রাব ত্যাগ করে। তাহলে সেই সংখ্যাটাই যদি 800 কোটির নিরিখে হয়, তাহলে একটি মলমূত্রের বিরাট পাহাড় তৈরি হয়ে যেতে পারে। বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গায় মলমূত্র জলের সঙ্গে মিশে যায়। অল্প জনবসতিপূর্ণ গ্রাম বা ছোট শহরে, মলমূত্র কাছাকাছি কোনও জলাশয়ে গিয়ে পড়ে। প্রাচীনকালে মানুষের মলমূত্র কৃষিকাজে ব্যবহৃত হওয়ার অনেক উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে এমন প্রকল্প রয়েছে, যাতে দেখা গিয়েছে মলমূত্র পুনর্ব্যবহার করা যায়।
কৃষিকাজে মানুষের মলমূত্র ব্যবহার করার জন্য প্যারিসে একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছে। লিসু নামক একটি পরীক্ষাগারে দীর্ঘদিন ধরে এই গবেষণা করা হচ্ছে। এটিকে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সার প্রস্তুত করা হচ্ছে। এই সার গম ফলাতে ব্যবহৃত হয়। কৃত্রিম সার ব্যবহার করেও একই পরিমাণ উৎপাদন পাওয়া যায় বলেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা জানাচ্ছেন, কৃত্রিম সার ফসফেট বা প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। আর মানুষের মলমূত্রকে সার হিসেবে ব্যবহার করলে পরিবেশে কার্বনের পরিমাণ বাড়বে না। বরং এটি জৈবভাবে মাটির গঠনকেও উন্নত করবে।
মানুষের মলমূত্র আর কোথায় পুনর্ব্যবহৃত হয়?
প্যারিসই বিশ্বের একমাত্র জায়গা নয়, যেখানে মলমূত্র পুনর্ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকায় একই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। রিচ আর্থ ইনস্টিটিউট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্টের একটি গবেষণা সংস্থা এই উদ্যোগ নেয়। এই গবেষণায় 2021 সালে, 180 জন তাদের প্রস্রাব কৃষির জন্য দান করেছিলেন। তারপরে সেই মলমূত্রকে রিসাইকেল করা হয় এবং কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়।
কৃষিকাজে মানুষের মলের ব্যবহার এই নতুন নয়:
প্রাচীনকালেও মানুষ মলমূত্রকে কৃষিকাজে ব্যবহার করত। তখনকার মানুষ জানত মানুষের মল ও মলে অনেক পুষ্টি উপাদান থাকে। এতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের মতো উপাদান রয়েছে, যা ফসলের বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর।
ভারতে সব সময়ই মলমূত্রকে কেন্দ্র করে একটি নাক সিটকানোর ব্যাপার রয়েছে। দেশে এসব জিনিসকে দুর্গন্ধময় বর্জ্য পদার্থ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ফলে এটিতে যতই সারের গুণাগুণ থাকুক না কেন, কোনওভাবেই তাকে ব্যবহার যোগ্য করা যায়নি। এর আরও একটি কারণ জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করছেন, ভারতে এমন কিছু হলে কৃষিকাজে বিরাট খারাপ প্রভাব পড়বে। কোথাও গিয়ে অন্য সব দেশের মতো ভারতে তেমন উন্নতশীল পরিকাঠামোও নেই, যাতে মলমূত্রকে সার হিসেবে তৈরি করা যায়। ফলে মানুষের মলমূত্রে থাকা প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়াকে দূর করা যাবে না। এই ব্যাকটেরিয়ার ফলে মানুষের শরীরে বিরাট ক্ষতি হতে পারে। অনেক ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে। ফলে এই সমস্যাটিকে মাথায় রেখেই এখনও ভারতে মলমূত্র পুনর্ব্যবহারের কোনও পদক্ষেপ নেননি গবেষকরা। কিন্তু যে দেশে গরুর মলকে কৃষিকাজ থেকে শুরু করে পুজোয় ব্যবহার করা হয়, সেই দেশে মানুষের মলের ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিন্তাধারা কবে পাল্টায়, সেটাই দেখার।