অন্বেষা বিশ্বাস
এক মাসে পরপর তিন বার বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সম্মুখীন হল নেপাল। সেই কম্পনের জের অনুভূত হয়েছে ভারতের দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ-বিহার জুড়ে। ভূমিকম্পের উৎসস্থল কলকাতা থেকে প্রায় সাড়ে ন’শো কিলোমিটার দূরে। আর ভূমিকম্পের অভিকেন্দ্র মাটি থেকে 10 কিলোমিটার নিচে। ফলে এই সবকিছুর দিকে নজর রেখেই বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যে কোনও মুহূর্তে বিধ্বংসী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠতে পারে ভারতের বেশ কিছু এলাকা। তবে হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। তাই মানুষকে সতর্ক থাকার এবং সমস্ত রকমের প্রস্তুতি অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা বাড়বে দিনের পর দিন। কিন্তু, কেন এমন আশঙ্কা তাঁদের? প্রাকৃতিক বিপর্যয় কি তবে আরও বিরাট রূপ ধারণ করবে?
নেপালের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে উত্তর ও পূর্ব ভারত…
স্বাভাবিকভাবেই এবার এই প্রশ্ন আপনার মনে আসতে বাধ্য, নেপালের ভূমিকম্পে কেন বারবার কেঁপে উঠছে উত্তর ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন এলাকা? কারণটি ঠিক কী? শুক্রবার অর্থাৎ 3 নভেম্বর নেপালের পশ্চিম ভাগ জুড়ে ভূমিকম্প হয়েছিল। আর তার কারণেই কেঁপে উঠেছিল দিল্লি-নয়ডা থেকে লখনউ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভূমিকম্পের জের আর শুধুমাত্র দিল্লিতেই সমাপ্ত থাকবে না। বিপর্যয় যদি পূর্ব প্রান্তে নেমে আসে, তবে বিপদ বাড়তে পারে কলকাতারও। এর কারণ কী জানেন? হিমালয়ের পাদদেশে থাকা সব এলাকাই ভূমিকম্পপ্রবণ। ফলে কলকাতাও কিন্তু ভূমিকম্পপ্রবণ কিংবা মৃদু ভূমিকম্পপ্রবণ জ়োনের মধ্যেই পড়ে।
টেকটনিক প্লেটে ঠোকাঠুকি হচ্ছে বারবার…
বিজ্ঞানীদের মতে, যে কোনও শহরে ভূমিকম্পের জেরে কতটা ক্ষতি হবে, তা নির্ভর করে সেই এলাকায় অপরিকল্পিত ও বেআইনিভাবে গড়ে ওঠা একের পর এক বহুতল নির্মান এবং জনসংখ্য বৃদ্ধির ওপর। তবে নেপালের ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ সব সময়ই কিছুটা বেশি। অর্থাৎ কম্পনের যা মাত্ৰা থাকে, তার থেকে বেশি হয় ক্ষয়ক্ষতি। তার কারণ নেপালের অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং জনঘনত্ব। ফলে যে পরিমাণ ভূমিকম্প হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে হচ্ছে, তা আরও ভয়াবহ দিকে যাবে। ভূতত্ত্ববিদদের হিসেব বলছে, হিমালয় লাগোয়া অঞ্চলের গভীরে টেকটনিক প্লেটে বারবার ঠোকাঠুকি হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে আরও বড় ভূকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। রিখটার স্কেলে সেই সব ভূমিকম্পের মাত্রা ছুঁতে পারে 8.5 অবধি।
টেকটনিক প্লেটে এভাবে সংঘর্ষের কারণ কী?
কয়েক কোটি বছর আগে টেথিস সাগর থেকে হিমালয় পর্বতমালার সৃষ্টি হয়েছিল ভূগর্ভে ভারতীয় টেকটনিক প্লেট আর ইউরেশীয় টেকটনিক প্লেটের ধারাবাহিক সংঘর্ষের ফলে। আশ্চর্যের বিষয় হল, ওই ভূগর্ভে টেকটনিক প্লেটের ঠোকাঠুকি আজও চলছে। আর সেই কারণেই হিমালয়ের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলিতে কম্পন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। ভারতের রাজধানী দিল্লি লাগোয়া অঞ্চল হিমালয়ের 200-300 কিলোমিটারের মধ্যেই পড়ে। ফলে সেখানে কম্পনের ঝুঁকি এমনিতেই বেশি।
বহুতলের ভিত আলগা হচ্ছে…
ভূকম্পবিদদের মতে, এত ঘনঘন ভূমিকম্পে বাড়ছে বড়সড় বিপদের আশঙ্কা। কিন্তু কবে সেই বিপদ কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় এসে উপস্থিত হবে, তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। কলকাতার রাজারহাট, সল্টলেক ও নিউটাউন এলাকা নিয়ে দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমি ভরাট করে গড়ে উঠেছে বহুতল। ভূকম্পন হলে ভূগর্ভস্থ জল উঠে এসে উপরের স্তরের মাটিকে নরম করে দেবে। আর মাটি নরম হয়ে গেলে বহুতলের ভিত আলগা করে দেবে, একথা বলতেই হয়। তার ফলেই বহুতল ভেঙে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। নিয়ম মেনে নগরায়ন, ভূগর্ভস্থ জলস্তর, মাটির ধারণক্ষমতা-সহ একাধিক বিষয় খতিয়ে দেখে তবেই উন্নয়নের পথে এগোতে হবে। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা বাড়লে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বড়সড়। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার মতো করে মানুষকে শুধু সচেতন করা যেতে পারে। আর সময় নেই। সচেতন হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনও উপায়ও নেই।