সম্পূর্ণ অন্ধকারে গাছের জন্ম দিয়ে নজির সৃষ্টি করলেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে গাছপালা বৃদ্ধি করেছেন তাঁরা। আর সেই প্রক্রিয়াই ভবিষ্যতে তাঁদের বড় দিশা দেখাতে চলেছে। এই পদ্ধতি একদিকে পৃথিবীতে গাছ জন্মানোর এক অন্য উপায়ের দিশা যেমন দেখিয়েছে, তেমনই আবার মঙ্গলগ্রহেও কীভাবে ফসল ফলানো যায়, তারও একটা সমাধানসূত্র বের করে দিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার ফুড জার্নালে। সেখানেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কীভাবে বিজ্ঞানীরা দুই-ধাপের রাসায়নিক পদ্ধতির শরণাপন্ন হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড, বিদ্যুৎ এবং জলকে অ্যাসিটেটে রূপান্তর করেছেন, যা ভিনিগারের প্রধান উপাদানের একটি রূপ।
কাজটা হয়ে যাওয়ার পরই খাদ্য-উৎপাদনকারী জীবগুলি অন্ধকারে বৃদ্ধি পেতে অ্যাসিটেট গ্রহণ করে। ঠিক যেমনটা সৌরশক্তি প্রবেশ করলে হয়। বিজ্ঞানীরা তখন রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সৌর প্যানেল ব্যবহার করেন।
কীভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে
গবেষকরা দাবি করেছেন, এই পদ্ধতিটি খাবারে সূর্যালোকের রূপান্তর দক্ষতা বাড়াতে পারে। কিছু খাবারের ক্ষেত্রে আবার এই পদ্ধতি সূর্যালোকের রূপান্তর দক্ষতা 18 গুণ বেশি কার্যকরী হতে পারে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটা তাঁরা করেছিলেন, তা হল কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো কাঁচামালকে দরকারি পণ্য এবং অণুতে রূপান্তর করতে ইলেক্ট্রোলাইজারের ব্যবহার। এই ইলেক্ট্রোলাইজারের আউটপুট পরিবর্তন করার মধ্যে দিয়েই বিজ্ঞানীরা খাদ্য-উৎপাদনকারী জীবের বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছেন।
এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, জৈবিক সালোকসংশ্লেষ কি তাহলে সেকেলে হয়ে গেল? না, তা কেন হতে যাবে। তার যেমন স্বাভাবিক নিয়ম, স্বাভাবিক ভাবেই গাছপালা দিনের আলোয় সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বেড়ে উঠবে। কিন্তু এই নতুন সিস্টেম বিজ্ঞানীদের অ্যাসিটেটের পরিমাণ উন্নত করতে এবং লবণের মাত্রা হ্রাস করার অনুমতি দেয়।
এ বিষয়ে একটি বিবৃতিতে ইউসি রিভারসাইডের গবেষণার লেখক রবার্ট জ়িঙ্কারসন বলছেন, “এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা খাদ্য উৎপাদনের একটি নতুন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম, যা সাধারণ জৈবিক সালোকসংশ্লেষের সীমা অতিক্রম করতে পারে।”
আর একটা প্রশ্ন এখানে উঠতে পারে খুব সঙ্গত কারণেই। তা হল, সূর্যের আলো ছাড়া কী কী ফসল ফলানো যেতে পারে? গবেষকরা দাবি করছেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে সবুজ শ্যাওলা, ইস্ট এবং ছত্রাকের মাইসেলিয়াম, মাশরুম ইত্যাদি এই কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষে অর্থাৎ অন্ধকারে জন্মাতে পারে। শুধু তাই নয়, এই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে শৈবাল উৎপাদনও সালোকসংশ্লেষণের চেয়ে চারগুণ বেশি শক্তি সাশ্রয়ী হতে পারে বলে দাবি করছেন গবেষকরা।