ভিনগ্রহীদের (Aliens) সন্ধান কি কেবল ভিন গ্রহেই মিলতে পারে? তাদের দেখতে কি ইটি বা জাদুর মতোই হতে হবে সব সময়? যদি সামুদ্রিক কোনও প্রাণীর মতো হয়? হতেও তো পারে। পৃথিবীর বাইরে এলিয়েন জীবনের সন্ধানের জন্য সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ স্থানগুলির মধ্যে কয়েকটি হল লুক্কায়িত সমুদ্র যা শনির চাঁদ এনসেলাডাসের মতো পুরু বরফের শেলের নিচে অবস্থিত। সেরকমই লুকিয়ে থাকা সমুদ্রে জলজীবনের কোনও এলিয়েনের সন্ধান পাওয়া যায় কি না, তার জন্য সাঁতারু রোবট (Swimming Robots) তৈরি করতে চলেছে নাসা (NASA), যার অর্থায়নের প্রক্রিয়াটি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
গবেষকরা আগেই জানিয়েছিলেন যে, শনির চাঁদ এনসেলাডাসের হিমায়িত পৃষ্ঠের ফাটলের মাধ্যমে জলের তরল প্লুমগুলি (পাখির পালকের মতো অংশ বিশেষ) মহাকাশে বিস্ফোরিত হয়। নাসার ক্যাসিনি মহাকাশযান যখন মহাজাগতিক কুয়াশার মধ্য দিয়ে উড়ে যায়, তখন এটি আকর্ষণীয় অণুগুলি সনাক্ত করে, যা অনেকটাই মিথেনের মতো জীবনের উপস্থিতির সঙ্গে জড়িত।
নাসার ইঞ্জিনিয়ার ইথান স্ক্যালার একটি কনসেপ্ট ডেভেলপ করেছেন, যেখানে এই ধরনের ভয়ঙ্কর পরিবেশ অন্বেষণে সেল ফোন আকারের জলজ ড্রোন বরফ গলিয়ে এলিয়েনের সন্ধান করতে পারবে। পোশাকি ভাষায় একে বলা হচ্ছে সেন্সিং উইথ ইন্ডিপেনডেন্ট মাইক্রো-সুইমার্স (SWIM) বা ছোট যান্ত্রিক সাঁতারুদের সঙ্গে সেন্স করার ক্ষমতা। স্ক্যালারের সেই চিন্তাভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে 3D প্রিন্টেড প্রোটোটাইপ তৈরি করার জন্য বিপুল অর্থও বিনিয়োগ করে ফেলেছে নাসা।
একটি বিবৃতিতে ইঞ্জিনিয়ার স্ক্যালার বলছেন, “একঝাঁক ছোট সাঁতারু রোবট, সমুদ্রের অনেক বড় আয়তনের জল অন্বেষণ করতে এবং একই এলাকায় একাধিক ডেটা সংগ্রহ করে পরিমাপ উন্নত করতে সক্ষম হবে।” নাসা ইনোভেটিভ অ্যাডভান্সড কনসেপ্টস (NIAC) প্রোগ্রামের তরফে ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় ধাপের ফান্ডিং হিসেবে এই প্রজেক্টে 600,000 মার্কিন ডলার অর্থ বিনিয়োগ করা হয়ে গিয়েছে। SWIM নামক এই প্রজেক্টে এর আগে ফেজ় ওয়ানে 125,000 মার্কিন ডলার অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছিল। প্রজেক্টের সম্ভাব্যতা সম্পর্কিত সমীক্ষা পরিচালনা এবং একটি নকশা তৈরি করার জন্য NIAC এই তহবিল বরাদ্দ করেছিল। অর্থাৎ এই প্রজেক্টের জন্য ইতিমধ্যেই 725,000 মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে ফেলেছে নাসা, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় 5,73,59,825 টাকা বা 6 কোটি টাকার মতো।
ত্রিভুজাকার রোবটগুলি যে ভাবে এলিয়েন জীবনের সন্ধান করবে।
ত্রিভুজাকার সাঁতারু রোবটগুলিতে থাকছে ‘ক্রায়োবট’ ডিজ়াইন, যা বরফ গলিয়ে সেটিকে সুড়ঙ্গে পরিণত করে রেডিয়েশনের মাধ্যমে। প্রসঙ্গত, ক্রায়োবট ধারণাটি বর্তমানে নাসার অন্যান্য প্রোগ্রামেও ডেভেলপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমান ক্রায়োবটগুলির ডিজ়াইন এমনই করা হয়েছে, যার দ্বারা যোগাযোগ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃষ্ঠের একটি ল্যান্ডারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। SWIM দলের এক বিজ্ঞানী স্যামুয়েল হাওয়েল বলেছেন,ক্ষুদ্র সাঁতারুরা অনুসন্ধানের নাগালকে ব্যাপক হারে প্রসারিত করতে পারবে, ঠিক যে ভাবে যেভাবে নাসার ইনজেনুইটি হেলিকপ্টার মঙ্গল গ্রহে পারসিভারেন্স মিশনের পরিসর বাড়িয়েছিল।
একটি এলিয়েন মহাসাগরকে স্পর্শ করতে ছোট বটগুলির এখনও অনেক সময় লাগবে। ধারণাটি বর্তমানে এমন একটি বিশ্বে অবস্থান করছে, যা কোনও নাসা মিশনের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। তবে এই একই নামের জোভিয়ান চাঁদে আসন্ন ইউরোপা ক্লিপার মিশন অবশ্যই ভূগর্ভস্থ সমুদ্রে লুকিয়ে থাকা অন্য হিমায়িত বিশ্বের থেকে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করবে। 2024 সালে এই প্ল্যানটি চালু হতে চলেছে, ইউরোপে যার ফলাফল আসতে অপেক্ষা করতে হবে 2030 সাল পর্যন্ত।