অন্বেষা বিশ্বাস
যতই দেওয়ালে বড় বড় করে লেখা থাক ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না, করিলে জরিমানা হইবে’, মানুষের চোখে পড়বে এমন হতেই পারে না। আর তাছাড়াও জরিমানার ভয় ক’জনই বা পায়। তাই ইচ্ছে মতো দেওয়াল ভিজিয়ে দেন কিছু মানুষ। সব দেশেই মোটামুটি একই চিত্র। তবে হয়তো ভারতে তুলনামূলকভাবে একটু বেশিই। একবার ভাবুন তো, আপনি দেওয়ালে প্রস্রাব করলেন। আর সেই প্রস্রাবই দেওয়াল আপনার গায়ে ফিরিয়ে দিল। শুনেই হেসে উঠলেন তো? লন্ডনে এমনটাই সম্ভব হয়েছে। প্রস্রাবের জেরে দেওয়ালদূষণের সমস্যায় জেরবার ছিল লন্ডন। তাই দেওয়ালগুলিতে পথচারীদের প্রস্রাব করা রুখতে অভিনব উপায় বের করল প্রশাসন। লন্ডনের সোহো সোসাইটি প্রশাসনের তরফে লন্ডনের দেওয়ালগুলিতে একটি বিশেষ রং লাগানো হয়েছে। এর ফলে কেউ দেওয়ালে প্রস্রাব করলে তার গায়েই ছিটকে আসবে।
সোহো সোসাইটির কমিউনিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান টিম লর্ডের মতে, ব্রিটেনের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে প্রায় 0.6 বর্গ কিলোমিটার স্থান জুড়ে লাইসেন্সপ্রাপ্ত 400টি বেশি বার রয়েছে। প্রতিদিন শত-শত মদ্যপ ব্যক্তি এলাকার বারগুলিতে ভিড় জমান। অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে বারগুলি। আর বার-রেস্তোরাঁয় আসা মানুষজন রাস্তার দেওয়ালগুলিতেই প্রস্রাব করেন। লন্ডনের সোহো সোসাইটি জানিয়েছে, প্রস্রাবের জন্য পাবলিক টয়লেট থাকা সত্ত্বেও রাস্তার উপরই অনেকে প্রস্রাব করেন। অনেক সময় স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে বার, রেস্তোরাঁ এবং থিয়েটারগুলির দরজায়ও প্রস্রাব করেন। তাই-ই প্রশাসনের এই কঠিন পদক্ষেপ। শহরটির বার, রেস্তোরাঁ, থিয়েটার এবং অন্যান্য বিনোদনের জায়গাগুলিতে এই বিশেষ রঙ লাগানো হচ্ছে।
এই রঙে বিশেষ কী রয়েছে?
পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রায় 1 মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে রাস্তার দেওয়ালগুলিতে বিশেষ রং লাগিয়েছে লন্ডন। দেওয়ালে বিশেষ ধরনের এই রং পেইন্ট করলে একটি জল-প্রতিরোধী স্তর তৈরি হয়। তাই প্রস্রাব বা অন্য কোনও তরল ফেললে তা ফিরে আসে। এটা হল অ্যান্টি-পি পেইন্ট। বিজ্ঞানে একে হাইড্রোফোবিক বলে। এই প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হয়েছে লন্ডনের দেওয়ালেও। লন্ডনে এই পরিকল্পনা গ্রহণের ফলে রাস্তার দেওয়ালে প্রস্রাবের ঘটনা অনেকটা কমবে বলে মনে করছে প্রশাসন।
ওয়েস্টমিনস্টার সিটি কাউন্সিলের ডেপুটি লিডার আইচা লেস বলছেন, ”এলাকার বাসিন্দারা ও ব্যবসায়ীরা প্রচণ্ড বিরক্ত। অবশেষে মানুষের দরজা ও অলিগলিতে প্রস্রাব করা ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছি আমরা। কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে কিছু-কিছু মানুষের এমন কাজ ঠেকাতে অন্যতম ভূমিকা নেবে এই অভূতপূর্ব রঙের ব্যবহার।” পেইন্ট ছাড়াও অনেকগুলি পোস্টার বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে। আর তাতে এক ধরনের QR কোড দেওয়া হয়েছে। ওই QR কোডগুলি মানুষকে তাদের কাছাকাছি টয়লেট খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। আর তারপরেও কাউকে দেওয়ালে প্রস্রাব করতে দেখা গেলে 15,070 টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
‘ফোর্বস’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, Ultra-Ever Dry নামে একটি সুপারহাইড্রোফোবিক পদার্থ (superhydrophobic substance)-এর 2টি স্তর থাকে এতে। কোনও উন্মুক্ত ক্ষেত্র বা surface area (এক্ষেত্রে দেওয়াল) যদি সামান্য এবড়ো-খেবড়ো হয়, তাহলে সেই দেওয়ালে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জল, তেল অথবা ওই জাতীয় বস্তু পাল্টা ছিটকে আসবে ব্যক্তির গায়ে। দেওয়ালে এই বিশেষ ধরনের রঙের ব্য়বহার যদিও লন্ডনে এই প্রথম নয়। এর আগে 2016 সালে জার্মানির হামবুর্গের রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টে এই একই রকম একটি পেইন্ট ব্যবহার করা হয়েছিল।