ভূতের রাজার বর পাওয়ার পরও গুপি-বাঘা জোয়ান হতে চেয়েছিল। বয়সের চাকা বিপরীত দিকে ঘোরাতে চেয়েছিল। তবে শুধু গুপি-বাঘাই কেন, শাশ্বত যৌবন লাভের আকাঙ্খায় 'যৌবনে ফোয়ারায়' স্নান করার কাহিনি বিশ্বের সর্বত্র প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুগ্ধ করেছে মানুষকে। কিন্তু, এবার বয়স কমানোর এই চিরাচরিত আকাঙ্খাকে বাস্তব করে তুলতে এগিয়ে এসেছেন কার্নেলকো নামে এক মার্কিন বায়োটেক সংস্থার সিইও ব্রায়ান জনসন।
'প্রজেক্ট ব্লুপ্রিন্ট'-এর মাধ্যমে তিনি তাঁর এপিজেনেটিক বয়স ৫ বছরেরও বেশি কমিয়ে ফেলেছেন বলে দাবি করেছেন। অর্থাৎ, সময় অনুযায়ী তাঁর বয়স ৪৫ বছর হলেও, তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বয়স ৪০-এর নীচে।
৩০ জন চিকিৎসক এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের একটি দল, ২৪ ঘণ্টা ব্রায়ান জনসনের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মকাণ্ড নিরীক্ষণ করে। তাঁরাই জনসনের প্রতিটি অঙ্গের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে বিপরীতমুখী করতে নিরলস গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
৪৫ বছরের জনসনের ইচ্ছে তাঁর শরীর হবে এক ১৮ বছরের যুবকের মতো। এর জন্য় প্রতি বছর তিনি ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ১৬ কোটি টাকারও বেশি অর্থ খরচ করছেন। ব্রায়ান জনসন বলেছেন, "আমি প্রমাণ করার চেষ্টা করছি যে শরীরের ক্ষয় অনিবার্য নয়।"
প্রজেক্ট ব্লুপ্রিন্টের অধীনে, জনসনকে অত্যন্ত কঠোর রুটিন অনুসরণ করতে হয়। সম্পূর্ণ নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করেন তিনি। প্রতিদিন মেপে মেপে ১,৯৭৭ ক্যালোরি খাদ্য গ্রহণ করেন। নিয়ম করে এক ঘন্টা শারীরিক কসরত করেন। প্রতি রাতে একই সময়ে ঘুমোতে যান। সকালে ওঠেন ভোর ৫টায়। দিনের শুরুতেই ক্রিয়েটাইন, কোলাজেন পেপটাইড-সহ একটি সবুজ রস পান করেন।
দিনভর তাঁর হার্ট রেট, পাল্স রেট, রক্তচাপের মতো ভাইটালস মাপা হয় এবং পর্যবেক্ষণ করা হয়। রোজ চলে আল্ট্রাসাউন্ড, এমআরআই, কোলোনোস্কোপি এবং রক্ত পরীক্ষা। ওজন, শরীরের ভর সূচক, চর্বির মাত্রা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করা হয় প্রতিদিন। এমনকি, একটি যন্ত্র তাঁর রাতে কতবার লিঙ্গোত্থান ঘটে, তাও গণনা করে।
জনসনের মেডিকেল টিমের নেতৃত্বে আছেন ২৯ বছর বয়সী চিকিত্সক অলিভার জোলম্যান। তাঁর দাবি, যে কোনও মানুষ চাইলে তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জৈবিক বয়স ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।
জোলম্যান বলেছেন, "পৃথিবীতে এমন কোনও ব্যক্তি নেই যাঁর বয়স সময় অনুযায়ী ৪৫ কিন্তু, প্রতিটি অঙ্গের জৈবিক বয়স ৩৫। যদি আমরা শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাগত দিক থেকে এবং পরিসংখ্যানগতভাবে প্রমাণ করতে পারি যে, ব্রায়ান জনসনের দেহে সেই পরিবর্তন ঘটেছে, তাহলে দারুণ বিষয় হবে। জেনেটিক্যালি অসম্ভব একটি বিষয়কে আমরা সম্ভব করতে পারব।"