মহাকাশে ভ্রমণ, ব্যাপারটা যতটা সহজ মনে হয় ততটা সহজ নয়। মহাকাশে যেতে হলে একজন নভোচারীকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর আরও অনেক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। 50 বছরেরও বেশি সময় ধরে, NASA-এর হিউম্যান রিসার্চ প্রোগ্রাম (HRP) মহাকাশচারীদের শরীরে সেই স্থানের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছে। কী কী করলে মহাকাশে নভোচারীদের একদম পৃথিবীর মতো করেই রাখা যাবে, সেই নিয়ে নাসার গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যস্ত। কিন্তু যে কোনও গবেষণার আগে মহাকাশচারীদের ঠিক কী কী সমস্যার মুখে পড়তে হয়, তা জানা প্রয়োজন। আর এই গবেষণা শুরু করার উদ্দ্যেশ্য হল নাসার আসন্ন মিশনগুলি মানব ভিত্তিক।
আমেরিকান স্পেস এজেন্সি চাঁদ ও মঙ্গলে মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। দীর্ঘ দিনের এই স্পেসফ্লাইটে মানবদেহ কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবে, তা জানা প্রয়োজন। নাসা তার ওয়েবসাইটে এই গবেষণা নিয়ে অনেক তথ্য দিয়েছে। আর সেখান থেকেই জানা গিয়েছে, মহাকাশে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন নভোচারীকে কোন কোন ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়। নাসা মঙ্গল মিশনের জন্য আগে সেই সব ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। এই বিপদগুলির নাম দেওয়া হয়েছে “RIDGE”, যার অর্থ হল স্পেস রেডিয়েশন, আইসোলেশন এবং কনফাইনমেন্ট, পৃথিবী থেকে দূরত্ব, মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র এবং প্রতিকূল পরিবেশ। এই সব কিছুই নভোচারীদের কাছে বিপদের কারণ।
স্পেস রেডিয়েশন:
মহাকাশে যাওয়া মহাকাশচারীদের জন্য বিকিরণ একটি বড় সমস্যা। যদিও পৃথিবীতেও বিকিরণ আছে, কিন্তু পৃথিবীর তুলনায় মহাকাশে বহুগুণ বেশি বিকিরণ পাওয়া যায়। গ্যালাকটিক মহাজাগতিক রশ্মির মতো বিকিরণ কণা থেকে নভোচারীরা সহজে টিকে থাকতে পারেন না। এই বিকিরণের কারণে মহাকাশচারীরা বিপজ্জনক রোগের মুখে পড়তে পারেন।
আইসোলেশন এবং কনফাইনমেন্ট:
মহাকাশচারীদের মহাকাশে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। এ কারণে তাদের আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে। এ ছাড়া ঘুমের সমস্যাও দেখা যায়।
পৃথিবী থেকে দূরত্ব:
পৃথিবী থেকে মহাকাশ স্টেশনের দূরত্ব প্রায় 386 কিলোমিটার। সেই তুলনায় চাঁদ পৃথিবী থেকে হাজার গুণ দূরে। পৃথিবী থেকে দূরে থাকার কারণে, সিগনাল থেকে শুরু করে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্পেস স্টেশনের জন্য কার্গো ফ্লাইট পাওয়া যায়, তবে চাঁদ বা মঙ্গল মিশনের জন্য মহাকাশচারীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র:
মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। মহাকাশচারীরা তাদের শরীরকে প্রতিনিয়ত খুব হালকা মনে করেন। অনেক সময় মহাকাশচারীদের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে তারা স্পেস মোশন সিকনেসে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া রক্তচাপ, হাড় ক্ষয়, তরল স্থানান্তরের মতো সমস্যাও দেখা দেয়। ফলে গবেষণা করে পৃথিবীতে ফিরে আসার পরে তাদের বহু মাস সময় লাগে আবার মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে।
প্রতিকূল পরিবেশ:
এক জায়গায় আবদ্ধ থাকার ফলে মহাকাশযানে জীবাণুর পরিমাণও অনেক বেশি। মানবদেহে বসবাসকারী অণুজীব এক মহাকাশচারী থেকে অন্য মহাকাশচারীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি হরমোনের মাত্রা এবং ইমিউন সিস্টেমে অনেক সমস্যা দেখা দেয়।