২০২০ সাল জুড়ে করোনার দাপটে আমজনতা অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছেন। গ্যাজেটের ব্যাপারে আগ্রহ বেড়েছে অনেকেরই। বছরভর টেক-গ্যাজেটের ট্রেন্ড কী ছিল দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে।
বেড়েছে স্মার্টফোনের বিক্রি-
অনলাইন ক্লাস হোক বা কর্মক্ষেত্রের ভার্চুয়াল মিটিং, সবেতেই প্রয়োজন গ্যাজেটের। তাই লকডাউনের সময় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে স্মার্টফোনের বিক্রি। উপায় না পেয়ে অনেকে আবার ল্যাপটপও কিনে ফেলেছেন। স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে ক্যামেরা কোয়ালিটির দিকেই সবচেয়ে বেশি নজর দিয়েছেন ক্রেতারা।
ওয়েব সিরিজ দেখায় ঝোঁক নবীন-প্রবীণ সকলের-
সেই মার্চ মাস থেকে দীর্ঘ সাত থেকে আট মাস বন্ধ ছিল সিনেমা হল। খোলেনি শপিং মলও। বাইরে ঘুরে-বেড়ানোর অবস্থাও ছিল না। তাই ওয়েব সিরিজই ছিল জনগণের অন্যতম আকর্ষণ। ওয়েব মাধ্যমে ভরপুর বিনোদন নিয়েছেন প্রবীণ প্রজন্মও। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি একাধিক ওয়েব সিরিজ রিলিজ হয়েছে লকডাউনের মধ্যে। আর সেইসব দেখেই সময় কাটিয়েছেন জনতা। কারণ করোনার দাপটে বন্ধ ছিল মেগা ধারাবাহিকের শুটিং। তাই টেলিভিশনেও দেখানো হচ্ছিল সিরিয়ালের পুরনো এপিসোড। বর্তমান সিরিয়ালের পাশাপাশি আগের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘এক আকাশের নীচে’ কিংবা ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’-এর মতো শো ফের শুরু হয়েছিল। সমীক্ষা বলছে এইসব সিরিয়ালের জনপ্রিয়তা এখনও রয়েছে তুঙ্গে।
সিনেমা রিলিজের অন্যতম মাধ্যম ওটিটি প্ল্যাটফর্ম-
সিনেমা হল বন্ধ থাকায় একাধিক সিনেমার রিলিজ যেমন পিছিয়ে গিয়েছে, তেমনই অনেক সিনেমা রিলিজও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। অনলাইন স্ট্রিমিং চ্যানেলগুলো সেইসব সিনেমা সহজে দেখার সুযোগও করে দিয়েছে দর্শকদের। সাবস্ক্রিপশনের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছিল অফার।
গুগল সার্চে সুশান্তের মৃত্যু, সঙ্গে করোনার ভ্যাকসিনের খোঁজ-
গত ১৪ জুন মারা গিয়েছেন বলিউডের তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। দিলখোলা হাসির তারুণ্যে ভরপুর অভিনেতার এমন মর্মান্তিক পরিণতি মেনে নিতে পারেননি কেউই। সেই জুন মাস থেকে এখনও পর্যন্ত সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে হাজার হাজার প্রশ্ন উঠেছে সকলের মনে। আর এবছর গুগলেও সেটাই সবচেয়ে বেশিবার সার্চ করে খুঁজেছেন নেটাগরিকরা। এছাড়া ‘কবে আসবে করোনার ভ্যাকসিন’ এই প্রশ্নের উত্তরও খুঁজেছেন সকলে।
অনলাইন শপিংয়ে স্মার্টফোনে আকর্ষণীয় অফার-
ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অনলাইন ক্লাস, ভিডিও কলে মিটিং (হোয়াটসঅ্যাপ বা জুম কিংবা গুগল মিট), সবক্ষেত্রেই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল স্মার্টফোন। জনতার সুবিধার্থে তাই লকডাউনের সময় ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজনের মতো অনলাইন শপিং রিটেলগুলিও প্রচুর ছাড় দিয়েছিল স্মার্টফোনের দামে। সংস্থাগুলো যেমন ভাল ব্যবসা করে লাভের পরিমাণ বাড়িয়ে নিয়েছে, তেমনই লাভ হয়েছে ক্রেতাদেরও।
নেটফ্লিক্সের স্ট্রিমফেস্ট-
বিভিন্ন ওয়েব স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রিপশন খরচ বাকিদের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তবে বছর শেষে দর্শকদের জন্য দু’বার স্ট্রিমফেস্টের আয়োজন করেছিল নেটফ্লিক্স। বিনা খরচে বিঞ্জ ওয়াচিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন দর্শকরা। সিনেমা হোক বা ওয়েব সিরিজ সবই দেখা গিয়েছিল ফ্রি-তে। নেটিফ্লিক্সের এই স্ট্রিমফেস্ট জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। অন্যদিকে সুশান্ত সিং রাজপুতের আচমকা মৃত্যুর পর তাঁর শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’-ও ফ্রি-তে দেখার সুযোগ দিয়েছিল ডিজনি হটস্টার।
ডেটা প্যাকে নজরকাড়া অফার-
প্রিপেড এবং পোস্টপেড দু’ধরণের কানেকশনের ক্ষেত্রেই একগুচ্ছ আকর্ষণীয় অফার এনেছিল এয়ারটেল, জিও এবং ভিআই (ভোডাফোন-আইডিয়া)। এই তালিকায় নাম রয়েছে বিএসএনএলেরও। ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অনলাইন ক্লাস এইসবের সুবিধার জন্য ইন্টারনেট প্যাক অর্থাৎ ডেটা প্যাকের ক্ষেত্রে প্রচুর অফার দিয়েছে টেলিকম সংস্থাগুলি।
বিক্রি বেড়েছে সাইকেল, স্কুটির-
ফোন, ল্যাপটপ, মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভস, ফেস শিল্ডের পাশাপাশি বিক্রি বেড়েছিল দু’চাকার। আনলকের প্রাথমিক পর্যায়ে সাইকেল এবং স্কুটি নিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তারপরেই বেড়েছিল সাইকেলের বিক্রি। অনেকে অবশ্য স্কুটি এবং বাইকও কিনেছেন এই পর্বে। তবে পরিসংখ্যানের নিরিখে সবকিছুর তুলনায় সাইকেল বিক্রির পরিমাণ একধাক্কায় অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ল্যাপটপ, কম্পিউটার ভাড়ায় নেওয়া-
শহরতলি এলাকায় ভাড়ায় ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এবং দু’চাকার যান নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। লকডাউন পর্বে মূলত ওয়ার্ক ফ্রম হোমের জন্য ঘরে ঘরে প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল কম্পিউটার। তবে অনেকের আর্থিক অবস্থা এতটাও ভাল নয় যে তারা চাইলেই ল্যাপটপ, কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন কিনতে পেরেছেন। তাঁরা এলাকায় খোঁজ করেছেন কোথাও ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে কিনা। স্থানীয় ক্যাফে থেকে অনেককে ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি আনলকের প্রাথমিক পর্বে যাতায়াতের জন্য স্থানীয় এলাকা থেকে অনেকেই বাইক এবং সাইকেল, স্কুটি ভাড়া নিয়েছেন।