BUDGET 2023: ঘর চালানো বড্ড কঠিন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে আবেগঘন চিঠি এক গৃহবধূর
স্বামী বলে যখন বেতন বাড়ছে না, তখন টাকা বাড়াবে কোথা থেকে? আমিও বুঝি ওঁর অবস্থা। কিন্তু দিদি, এখন তুমি বলো আমাদের কী করা উচিত? কোন খরচ বন্ধ করা উচিত? এখন কি পেট ভরে খাওয়া উচিত নয়? কে স্বেচ্ছায় ওষুধ খায়? কিন্তু ওষুধ তো আমাদের খেতেই হবে।
নির্মলা দিদি,
আমার নাম রচনা। আমি আম্বালার বাসিন্দা। গত বছর যখন আমি এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম, তখন আমি আপনাকে টিভিতে কথা বলতে দেখেছি। আমার আপনাকে খুব ভালো লেগেছে এবং আজ অবধি আমার মনে আছে আপনি বাজেটে আমাদের মহিলাদের জন্য ভাল ভাল কথা বলেছিলেন।
আমার বাড়িতে টিভি খুব বেশি রিচার্জ হয় না। স্বামী-সন্তান শুধু মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। নির্মলা দিদি, আমাদের কথাটা তুমি খুব ভালো করে বুঝতে পারছ। তাই তোমাকে এই চিঠিটা লিখছি। আমার ছেলে মোহিত এখন স্কুলে যায়। সে লিখতে শিখেছে, সে আমার হয়ে পেন্সিল দিয়ে এই চিঠিটি লিখেছে। দিদি, আমার স্বামী একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। মোহিত এবং গরিমা দুজনেই স্কুলে যায়। আমার স্বামী এবং সন্তান ছাড়াও আমার বৃদ্ধ শাশুড়িও আমাদের সঙ্গে থাকেন।
দিদি, যদিও তুমি আমার মতো রান্নাঘরের দেখাশোনা কর না, আমি তাও ভাল করেই জানি আমাদের কোনও সমস্যাই তোমার কাছে গোপন নেই। গত এক বছরে তিন দফা দাম বাড়িয়েছে দুধ বিক্রেতারা। তারা বলেছিল, ভুসি ও পশুখাদ্যের দাম বেশি, তাই তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।
দিদি, রেশনের খরচও প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। কখনও সর্ষের তেলের দাম বাড়ে, কখনও বাড়ে মশলা, পেস্ট, সাবান, স্ক্রাবের দাম, আবার কখনও বাড়ে অন্য কিছু।
দিদি, বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, কিন্তু গত বছর ময়দার দাম অনেকটা বেড়েছে। কোন বাজারে মূল্যবৃদ্ধির আগুন লেগেছে জানি না। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম প্রায় ১১০০ টাকা গিয়েছে। দিদি, প্রথম সিলিন্ডার আসার পর আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা আসত। এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমি যখন এজেন্সির কাছে এই বিষয়ে খোঁজখবর নিলাম, তখন আমাকে বলা হলো, সরকার নাকি এটা বন্ধ করে দিয়েছে।
আমি বললাম আমাদের দিদি আমাদের সঙ্গে এটা করতে পারবে না। দিদি, এজেন্সির লোককে কী জবাব দেব প্লিজ বাজেটে বলুন। আমি আমার স্বামীকে বলেছি সে মোবাইলে আপনার বক্তৃতা শুনবে।
দিদি আগে স্বামীর কাছ থেকে লুকিয়ে কিছু টাকা বাঁচাতাম। কিন্তু এখন সংসারের খরচ মেটানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আগে আমার শাশুড়ির ওষুধের জন্য মাসে ৯০০ টাকা খরচ হত। এখন মাসে ১,২৫০ টাকা লাগে, এক লাফে এত খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন বাড়িতে অনেক ঝগড়া হয়।
স্বামী বলে যখন বেতন বাড়ছে না, তখন টাকা বাড়াবে কোথা থেকে? আমিও বুঝি ওঁর অবস্থা। কিন্তু দিদি, এখন তুমি বলো আমাদের কী করা উচিত? কোন খরচ বন্ধ করা উচিত? এখন কি পেট ভরে খাওয়া উচিত নয়? কে স্বেচ্ছায় ওষুধ খায়? কিন্তু ওষুধ তো আমাদের খেতেই হবে।
দিদি, এবারের বাজেট তৈরির সময় এমন একটা কাজ করা উচিত যাতে হয় আমার স্বামীর আয় বাড়ে বা আমাদের খরচ কম হয়। দিদি, আমরা কম শিক্ষিত, আপনি অনেক কিছু জানেন। দিদি আমাকে একটু সাহায্য করুন, আমি তাহলে ঠিক সংসার চালিয়ে দেব। আমাদের হতাশ করবেন না দিদি।
তোমার,
রচনা