আমায় ‘ভাষা’ইলি রে- রিকশাচালকদের নাট্যচর্চা

ওঁরা তৈরি করে ফেলেছেন 'রিকশাচালক নাট্য সংস্থা'।

| Updated on: Feb 22, 2021 | 4:50 PM

“আমি যে রিস্কাওয়ালা দিন কি এমন যাবে
বলি কি ও মাধবী তুমি কি আমার হবে”
‘চন্দ্রবিন্দু’র ‘রিস্কাওয়ালা’ ‘বরাবর পাগলা ভোলা’… সে ‘রিস্কা কবি গো’-ও…
আর এই রিকশাচালকরা মাঝ দুপুরে নিজেদের রিক্সা দাঁড় করিয়ে ওঁরা চলেছেন রিহার্সালে। নাটকের রিহার্সাল। গত কুড়ি বছর ধরে কাজের ফাঁকে-ফাঁকে থিয়েটার করে ওঁরা তৈরি করে ফেলেছেন ‘রিকশাচালক নাট্য সংস্থা’। কাছে-দূরে কল শো আর নাট্য উৎসবে অংশগ্রহণ করে খ্যাতিও অর্জন করেছেন ওঁরা। সাধারণ মানুষের মধ্যে রিকশাচালক বলতেই যে ছবি, জীবনযাপনের যে নষ্টচিত্র ভেসে ওঠে, তাকে নিজেদের কাজ দিয়ে বদলে দিয়েছেন ওঁরা। শুরুটা সেই ১৯৯৮-এ। গড়িয়ার ‘অশনি নাট্যম’ চেয়েছিল সমাজের ‘ছোট’পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের থিয়েটার-এ যুক্ত করতে। সেই পথচলায় কেটে গেল প্রায় দুই দশক। তাই সস্তার মদ খেয়ে অশ্রাব্য গালিগালাজ দিয়ে আর অদৃষ্টকে দোষারোপ করে অন্ধকার গলিঘুঁজিতে জীবন খোঁজা নয়। বরং উইংসের ধার দিয়ে দৃপ্ত পায়ে বেরিয়ে এসে স্পটলাইট খুঁজে নিয়ে ওঁরা দ্যুতি ছড়াচ্ছেন সাফল্যের। যে সাফল্য বদলে দিচ্ছে ওঁদের জীবন। কর্ণ, রাজকুমার, রতন, সুজিত, গণেশদের দেখে স্ট্যান্ডের আর পাঁচজন রিকশাচালক তাই শুধরে নিচ্ছেন প্রাথমিক ভুল ভুলত্রুটিগুলি। কেবল সঠিক ভাড়া নেওয়াই নয়, যাত্রীদের প্রতি ব্যবহারেও এসেছে বদল। আর তার ফলে ধীরে হলেও বদলাচ্ছে ওঁদের প্রতি সমাজের ধারণাগুলো। ওঁদের মধ্যে তথাকথিত শিক্ষার আলো নেই। কারও পড়াশোনার গণ্ডি ক্লাস ফোর অবধি। তাই থিয়েটারের মঞ্চটাকেই ক্লাসরুম করে নিয়ে রোজ শিখছেন ওঁরা। শিখছেন আর সমৃদ্ধ করছেন নিজেদের। থিয়েটার জীবনের কথা বলে। আর যে জীবন হাজার অভাব-অভিযোগকে দূরে ফেলে জড়িয়ে ধরে থিয়েটারকে, বাঁচার অবলম্বন হিসেবে; তার ভাষার, ভালবাসার উত্তরণ তো ঘটবেই অন্ধকার থেকে আলোয়, অসুন্দর থেকে সুন্দরের দিকে। আসলে ‘বরাবর পাগলা ভোলা’ এই যে সব ‘রিস্কাওয়ালা’, তাঁদের দৈনন্দিনের ভাষা ভেসে বেড়ায় দৈনন্দিনের জীবন সংগ্রামের রুক্ষ সরণিতে… সেই সরণিতে কেউ শিল্পকে কিনে নিতে চায় না ভাড়া দিয়ে… সেই রিকশাযাত্রার পথ দরদামের ঊর্ধ্বে…

Follow Us: