উপলক্ষ্য নারী… দিবস-রজনী | পর্ব ৪ : অ্যাসিড হামলা বনাম জীবনজয়ের গল্প

aryama das

|

Updated on: Mar 08, 2021 | 1:40 PM

সারা দেশে যত অ্যাসিড হামলা ঘটে তার অধিকাংশরই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয় না

সারা বিশ্বের ৬৬ % অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটে ভারত। আমাদের দেশে অ্যাসিড হামলার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ আর উত্তরপ্রদেশ শীর্ষে। সারা দেশে যত অ্যাসিড হামলা ঘটে তার অধিকাংশরই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয় না। আজ রইল দুই কন্যের গল্প। ময়না আর কাকলি। আমাদের সহ নাগরিক এই দুই মেয়ের মুখ এটা নয়। এটা কারও নোংরা মস্তিস্কের আবর্জনা, যা সেই মানুষগুলো ছুঁড়ে মেরেছিল ওঁদের দেহে, ওঁদের মুখে। ওঁদের শেষ করে দেবে বলে। কিন্তু হানাদার হামলাকারীদের উদ্দেশ্যকে দস্তুরমতো বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ময়না আর কাকলিরা বেঁচে আছেন সফলভাবে। একটা অমানুষ আর তার মাঝে ঘৃণার তীব্র ঘনীভূত অ্যাসিডের ঝাঁঝকে কাটিয়ে উঠে বিজয়ী হয়েছে এই নারীদের আমিত্ব। নিজেদের বীভৎস রুপের প্রতিফলন আয়নায় রোজ দেখে, নিজের ত্বকের জৌলুস, পেশীর কমনীয়তা বিসর্জন দিয়েও তাঁরা হারিয়ে দিয়েছেন হামলাকারীর আস্ফালনকে।

ময়নার বাবা-মা পণ দিতে না পারায় এবং কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধেই চরম প্রতিহিংসা নেয় তার স্বামী শ্বশুরবাড়ির লোকজন ? অথচ সেই মানুষগুলোকে খাওয়ানোর জন্যই রান্না করছিলেন ময়না। জ্বলন্ত উনুনের সামনে তাঁর গায়ে অ্যাসিড আর কেরোসিন ছুঁড়ে দেওয়া হয়।এরপর নিজের চিকিৎসা আর মেয়ের পড়াশোনা চালাচ্ছিলেন তিনি কিন্তু সেখানেও বাঁধ সাধল তার স্বামী। মেয়ের বয়স যখন ১৫ তখন তাকে নিয়ে যায় সে। কিছুদিন পর আত্মহত্যা করে ময়নার মেয়ে।

নিজের বাপের বাড়ির পাড়াতে অ্যাসিড হামলার শিকার হন খড়িবেড়িয়ার কাকলি দাস। দুই সন্তানকে নিয়ে ডাক্তারখানায় যাচ্ছিলেন তিনি। এমন সময় বাইকে চেপে এসে হামলা চালায় অভিযুক্ত লব ঘোষ। কাকলির অভিযোগ দীর্ঘদিন তাঁকে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করত সে। তার বিকৃত প্রস্তাবে সায় না দেওয়ায় এই অ্যাসিড হামলা। কাকলির কোলে থাকা তাঁর এক বছরের ছোট্ট মেয়ের নাকে-মুখে আর হাতেও লাগে অ্যাসিডের ছিটে। সে ক্ষত আজও বয়ে চলেছে তার একরত্তি মেয়েটি।
অ্যাসিড হামলা এই নারীদের ঘর করতে শিখিয়েছে যন্ত্রণার সঙ্গে। অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছে মুখ-হাত-গলা-গা। কিন্ত পোড়েনি ওঁদের জীবনের লক্ষ্য-স্বপ্নগুলো। পোড়েনি ওঁদের মনের জোর। বিকৃত মানুষের ছুঁড়ে দেওয়া জ্বালাময় ঘৃণা ওঁদের সাময়িকভাবে থামিয়ে দিলেও নষ্ট করতে পারেনি ওঁদের আমিত্ব আর স্বাভিমান। জীবনের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে ওঁরা আজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। ওঁদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে ভরসার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন কিছু মানুষ।

Published on: Mar 08, 2021 01:39 PM