উপরের ছবিটি দেখে আপনার মনের কোণে কোনও খারাপ কোনও অনুভূতির জন্ম হতেই পারে। কেউ কেউ শিউরেও উঠতে পারেন। এক যুবতীর স্তন পান করছেন এক বৃদ্ধ। এ ছবি দেখে কোনও অবৈধ সম্পর্কের কথাও ভাবতে পারেন কেউ কেউ। কিন্তু, এর নেপথ্য কাহিনী জানলে চমকে উঠবেন আপনিও (Roman Charity’s Picture)। এই গল্প সেই খ্রীস্টীয় প্রথম শতকের গল্প। গল্প নাকি ইতিহাস, সে প্রশ্ন বিতর্কিত। তবে, রেনেসাঁসের যুগের বেশিরভাগ ছবির মতো এই ছবির পিছনের গল্পটি কিন্তু বাইবেল থেকে নেওয়া হয়নি।
শোনা যায়, সে সময় মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিচিত্র সব রীতি প্রচলিত ছিল। সেই সময় সক্রেটিসকে দেওয়া হয়েছিল হেমলক বিষ। মৃত্যুদণ্ড দিতে অনেককে চড়ানো হতো শূলে। মৃত্যুদণ্ড দিতে অনেককেই আবার হাতির পায়ের নীচে রাখা হত। ছবিতে দেখতে পাওয়া বৃদ্ধের নাম সিমন। কোনও এক অপরাধে তাঁকেও দেওয়া হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু, মরতে হবে অনাহারে। এমনই ছিল নির্দেশ। কারারক্ষীদের সাফ নির্দেশ দেওয়া হয় কোনরকম খাবার বা জল যেন তাঁকে না দেওয়া হয়। এভাবেই কাটছিল দিন। ধীরে ধীরে শরীর শুকিয়ে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু, শরীর দুর্বল হয়ে জীর্ণ হয়ে গেলেও মৃত্যু হচ্ছিল না তাঁর। এ কথা ভাবাতে শুরু করে সকলকেই। কপালে চিন্তার ভাঁজ কারারক্ষীদের। কীভাবে দিনের দিনের পর দিন কিছু না খেয়েও বেঁচে রয়েছেন ওই বৃদ্ধ তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা।
এদিকে বৃদ্ধের সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রোজই নিজের বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন সিমনের কন্যা পেরো। শোনা যায় কারারক্ষীদের নজর এড়িয়ে তিনিই রোজই একটু একটু করে নিজের বুকের দুধ খাওয়াতেন বাবাকে। মেয়ের স্তন পান করেই কোনওমতে বেঁচে ছিলেন ওই বৃদ্ধ। এই গল্পই পরিবর্তিতে ছবি হয়ে ধরা পড়ে সেই সময়ের নানা চিত্র শিল্পীর মানসপটে। শোনা য়ায়, ‘রোমান চ্যারিটি’ নামে প্রথম বিখ্যাত তৈলচিত্রটি আঁকেন জাঁ-ব্যাপটিস্ট গ্রুজ। সেটা অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে। তারপর জোহান যোফ্ফানি, বারবারা ক্র্যাফটের মতো অনেক বিখ্যাত শিল্পীই রঙের আঁচড়ে এই গল্পকে ফুটিয়ে তুলেছেন। এদিকে, বাবাকে নিজের স্তন পান করিয়ে বাঁচিয়ে রাখলেও কিছু সময় পর তা নজরে পড়ে যায় কারারক্ষীদের। শোনা যায় এরপর এই ঘটনা ছুঁয়ে যায় বিচারকের মন। তিনি মুক্তি দিয়ে দেন সিমনকে। অনেকে আবার বলেন, মুক্তি নয় বাবার মতোই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল পেরোকেও।