Personality Test: রুবিন ফুলদানি (Rubin Vase) কয়েক দশক ধরে মানুষকে মোহিত করে আসছে। এ এক এমনই অপটিক্যাল ইলিউশন (Optical Illusion), যা আমাদের চাক্ষুষ উপলব্ধিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। প্রথমবার ছবিটি দেখার পর আপনার মনে হবে, এটি কেবলই একটি ফুলদানি। কিন্তু আরও কিছুক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে লক্ষ্য করার পর আপনি বুঝতে পারবেন, সেখানে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকা দুটি মুখের রূপরেখাও রয়েছে। মানুষের ব্যক্তিত্ব পরীক্ষার জন্য অনেক দিন আগেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল এই রুবিন ফুলদানি। 20 শতকের গোড়ার দিকে ড্যানিশ মনোবিজ্ঞানী এডগার রুবিন (Edgar Rubin) দ্বারা পরিচালিত গবেষণায় এই ফুলদানির ছবিটি পরিষ্কার করে দিয়েছিল যে, একজন ব্যক্তির উপলব্ধি তাঁর জ্ঞান এবং চিন্তা প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।
প্রাথমিক ভাবে এই ফুলদানিটি দেখার পর আপনার সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিই আরও বিশ্লেষণাত্মক এবং যৌক্তিক চিন্তাভাবনার দিকে ঝুঁকে পড়বে। আপনাকে তৎক্ষণাৎ সমস্যার সমাধানকারী করে তুলবে। তবে এই ফুলদানিই আপনি যদি আবার একটু খুঁটিয়ে দেখেন এবং আপনার নজরে আসে ওই দুটি মুখের রূপরেখা, তাহলে আপনি সৃজনশীল মানুষ তো বটেনই। সেই সঙ্গে একজন মহান উদ্ভাবকও বটেন। তাই, পরের বার আপনি যখন এমনতর কোনও রুবিন ফুলদানির মতো ছবি বা ছবির ধাঁধা লক্ষ্য করবেন, তখন তা খুঁটিয়ে লক্ষ্য করবেন। তা থেকেই জানতে পারবেন, আপনি বিশ্লেষণাত্মক নাকি সৃজনশীল ব্যক্তি।
ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা করা ছাড়াও রুবিন ফুলদানির অপটিক্যাল ইলিউশনটি মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মানুষের চাক্ষুষ উপলব্ধি এবং জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলি অধ্যয়ন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। ব্সতুত, এটি মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল পথকে সক্রিয় করতেই মনোবিজ্ঞানের কাজে এসেছে। কোনও বস্তু ও তার আকার সনাক্ত করতে পারে মস্তিষ্কের ভেন্ট্রাল পথ। জাপানের মনোবিজ্ঞানী এবং অপটিক্যাল ইলিউশনের স্রষ্টা আকিয়োশি কিতাওকা (Akiyoshi Kitaoka) বলছেন, “আমাদের চোখ একটি আশ্চর্যজনক যন্ত্র, যা রং ও ছায়াগুলির বিশাল পরিসর নিতে পারে। এই অপটিক্যাল ইলিউশন আসলে আমাদের প্রাকৃতিক প্রবণতাগুলির সঙ্গে খেলা করে। আমাদের সেই জিনিসগুলি দেখতে দেয়, যা সত্যিই নেই বা আছে বলে আমরা মনে করি।”
তবে মজার বিষয়টি হল, রুবিন ফুলদানিই একমাত্র নয়, যা মানুষের ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা নেয়। 19 শতকের প্রথম দিকে মার্কিন মনোবিজ্ঞানী জোসেফ জাস্ট্রো (Joseph Jastrow) প্রথম ‘হাঁস-খরগোশ’ অপটিক্যাল ইলিউশন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন, যা আজও ব্যাপক জনপ্রিয় এবং তা ব্যক্তিত্বের পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। সেই ছবিতে যাঁরা প্রাথমিক ভাবে হাঁস দেখেন, তাঁরা আরও ব্যবহারিক এবং বাস্তববাদী। আবার যাঁরা সেই ছবিতে খরগো দেখেন, তাঁরা আরও কল্পনাপ্রবণ এবং সৃজনশীল।
এখন বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই, একটা অপটিক্যাল ইলিউশন মানে শুধুই তা ছবি নয়। শুধুই তা ব্যক্তিত্বের পরীক্ষা নয়। যুগ যুগ ধরে ছবির ধাঁধাগুলিকে বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগটাই মনোবিজ্ঞানের জগতে। এখন আপনি যদি প্রতিদিন একটা করে ছবির ধাঁধা সমাধান করতে পারেন, তা আপনার মস্তিষ্ক ও মন দুটোর জন্যই যে কতটা ভাল, আন্দাজ করতে পারছেন বোধহয়।