আলিপুরদুয়ার: এ যেন স্থলের সেন্ট মার্টিন। যা বিচ্ছিন্ন গোটা দুনিয়া থেকে। বাঁধ না থাকায় হুড়মুড়িয়ে জল ঢোকার সময় অসহায় মানুষগুলো যেন জুলুজুলু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওপারের স্থলভাগের দিকে। সামান্য একটি সেতুর অভাবে গোটা এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ নেই আর পাঁচটা গ্রামের। রাতের ঘুম কেড়েছে নদী বাঁধ না থাকায়। তাই নদী পেরোতে ভরসা বলতে কেবল কয়েকটা ছোট নৌকো। অসম-বাংলা সীমান্তে সংকোশ নদীর তীরে এই গ্রামই ‘ব্রাত্য’ তালিকার অন্যতম নাম।
আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম ব্লকের কুমারগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই পঞ্চায়েত এলাকার একটি ছোট্ট গ্রাম বিত্তিবাড়ি। সংকোশ নদী পার হয়ে যেতে হয় গ্রামটিতে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে গ্রামটিতে এসেছেন জনপ্রতিনিধিরা, সরকারি আধিকারিক এবং বড়কর্তারা। গ্রামের দুরবস্থা পরিদর্শনেও এসেছেন বহুবার। কিন্তু তবুও নদী বাঁধ পায়নি বিত্তিবাড়ি। তাই বর্ষাকাল এলেই দুর্ভোগ যেন শিখড় সীমায় পৌঁছে যায়। বাঁধ না থাকায় নদীর জল ফুলেফেঁপে উঠলেই ঢুকে যায় গ্রামের ভিতর। নষ্ট হয়ে যায় বহু ফসল। এমনকী জলের গ্লাসে চলে গিয়েছে একমাত্র বাঁশের সাঁকোটিও।
গ্রামের মানুষের অভিযোগ, সরকারের বিভিন্ন স্তরে একাধিকবার লিখিত আবেদন নিবেদন করেও কোনও সুরাহা হয়নি। মেলেনি পাকা সেতু কিংবা নদী বাঁধ কোনটাই। ফলে প্রতিদিন একটু একটু করে ভাঙনে উদ্বেগ বাড়ে বাসিন্দাদের। প্রায় এক হাজার বাসিন্দার এটাই সমস্যা। সম্প্রতি রাজ্যের সেচমন্ত্রী আলিপুরদুয়ারে এলেও বিত্তিবাড়ি ঘুরে দেখেননি। তবে কি জলের গ্রাসে চলে যাবে আস্ত গ্রামটাই? আশঙ্কার প্রহর গোনেন ছেলে-বুড়োরা।
মঙ্গলবার গ্রামটি পরিদর্শনে যান কুমার গ্রামের বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওরাও। ঘুরে দেখেন সংকোশ নদীর ভাঙনে বিধ্বস্ত এলাকা। তিনি বলেন, ‘সংকোশ নদী যেভাবে ভাঙছে তাতে খুব শীঘ্রই গোটা গ্রামটি হারিয়ে যাবে। শিক্ষা স্বাস্থ্য সহ সমস্ত পরিষেবাতেই পিছিয়ে ছোট্ট গ্রাম বিত্তিবাড়ি। আমি এখানকার সমস্যা নিয়ে বিধানসভায় বলেছি। কিন্তু ফান্ড নেই তাই নাকি বাঁধ হচ্ছে না।’ এ দিকে, গ্রামের দুরবস্থার জন্য সাধারণ মানুষ রাজ্য সরকারকেই দুষছেন। প্রশাসনের উদাসীনতাতেই গ্রামের বিপদ প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে অভিযোগ তাঁদের। যেন গোটা গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছে প্রশাসন নিজেই।