তাঁদের নাচের তালে পা মিলিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, লকডাউনে কর্মহীন সেই রাভা শিল্পীরা

সৈকত দাস |

Jun 07, 2021 | 7:29 PM

"কলকাতা থেকে নাচ দেখতে আসতেন পর্যটকরা। এখন এক বছর সে সব বন্ধ। তাই জঙ্গলে যেতে হয়। মাছ আর মাশরুম আনতে। পাঁচ জনের পরিবার চলছে এভাবে।''

তাঁদের নাচের তালে পা মিলিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, লকডাউনে কর্মহীন সেই রাভা শিল্পীরা
নিজস্ব চিত্র

Follow Us

প্রীতম দে: গত ফেব্রুয়ারি পাহাড়ে সফরে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায় সেদিন অন্য রূপে ধরা দেন মুখ্যমন্ত্রী। ধামসা-মাদলের তালে রাভা শিল্পীদের সঙ্গে নাচে পা মেলান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা (Corona) আবহে সেই রাভা শিল্পীদের শেষ রুজিরুটিতে পড়েছে কোপ।

বিগত বছরগুলোতে বিকাল হলেই চিলাপাতায় বসত রাভা নাচের আসর। বিকেলবেলায় জঙ্গল সাফারি শেষে পর্যটকদের কাছে সেটাই ছিল মুখ্য আকর্ষণ। কিন্তু গত চোদ্দমাস ধরে প্রথম লকডাউনে বন্ধ ছিল সে সব। প্রথম লকডাউন পরবর্তীতে অন্যান্য জঙ্গলে আঞ্চলিক আদিবাসী নৃত্য শুরু হলেও চিলাপাতায় তা আর শুরু হয়নি। যার ফলে রোজগারহীন হয়ে আছে আন্ডু, মেন্দাবাড়ি, কুরমাই বনবসতির রাভা শিল্পীরা। কেউ জঙ্গলে বুনো আলু তুলে, মাছ ধরে বিক্রি করেন তাঁরা। তাতে রোজগার আর কতটুকু। এভাবেই প্রায় অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটছে আদিবাসী নৃত্য শিল্পীদের। অভিযোগ, সরকারি সহায়তা মেলেনি। আপাতত তাঁদের কিছুটা কষ্ট লাঘবে এগিয়ে এসেছে ইকো ট্যুরিজম সোসাইটির সদস্যরা।

ইকো ট্যুরিজম সোসাইটির আহ্বায়ক অভীক গুপ্তের কথায়, “এতদিন ধরে এই মানুষগুলোর পাশে ন্যূনতম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি ফরেস্টের রেঞ্জ অফিস। তাই যে কাজটা করা উচিত ছিল বন দফতরের, সেই দায়িত্বটা এই কঠিন সময়ে দাড়িয়েও পালন করলেন চিলাপাতা ইকো ট্যুরিজম সোসাইটির সদস্যরা।” আন্ডুবনছায়ার শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। আপাতত আগামী ১৫ জুন মেন্দাবাড়ি এবং পঁচিশে জঙন কুরমাই বনছায়ার শিল্পীদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এই সংগঠন।

ফালাকাটা-সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় আদিবাসীদের রাভা নাচ বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রেও এই নাচের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পর্যটকদের মনোরঞ্জন করা হয়। কিন্তু লকডাউনে সে সব বন্ধ।

এক রাভা শিল্পী সীতা রাভার কথায়, “কলকাতা থেকে নাচ দেখতে আসতেন পর্যটকরা। এখন এক বছর সে সব বন্ধ। তাই জঙ্গলে যেতে হয়। মাছ আর মাশরুম আনতে। পাঁচ জনের পরিবার চলছে এভাবে।”

আর এক শিল্পী বৃষ্টি রাভা বলেন, “তখন বিকেল হলেই পর্যকরা আসতেন। নাচ দেখে এক একজন পঞ্চাশ টাকা করে দিতেন। মাসে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা আসত। এখন তো সে সব নাই। বাড়িতেই বসে এখন দিন যায়। হাজরার কাজও লকডাউনে বন্ধ। কেউ কেউ জঙ্গলে যায় মাছ মারতে, আলু কুড়োতে। সেসব বাজারে বিক্রি করেই কোনও রকম দিন চলছে।” সরকারি সাহায্য কিছু পান না? প্রশ্নের উত্তরে শুধু নির্বাক চাউনি দিলেন এই আদিবাসী শিল্পীরা।

আরও পড়ুন: ‘মিষ্টির দোকান ছাড় পেলে আমরা বাদ কেন?’ মুখ্যমন্ত্রীর ‘দুয়ারে’ বিউটিশিয়নরা 

Next Article