আলিপুরদুয়ার : কুমিরের সঙ্গে মরণপণ লড়াই। দেহে একাধিক ক্ষত। কিন্তু, সেই ক্ষত তাকে হার মানাতে পারেনি। ওই ক্ষত নিয়েই রাজার মতো বেঁচে ছিল আরও ১৫ বছর। শেষ পর্যন্ত হার মানতে হল বয়সের কাছে। আজ আলিপুরদুয়ারের জলদাপাড়ার দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে মৃত্যু হল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger) ‘রাজা’র। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ২৫ বছর ১০ মাস। আজ তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হল ‘রাজা’র মতোই। চিতায় ফুল, মালা দিয়ে স্যালুট জানিয়ে তার দেহ দাহ করা হয়।
রাজার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের আধিকারিকরা বললেন, ২০০৮ সালে সুন্দরবনে একটি কুমিরের সঙ্গে লড়াই হয়েছিল এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। বাঘটির শরীরের ১০টি জায়গা ক্ষতবিক্ষত করেছিল কুমিরটি। দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে আনা হয় তাকে। জলদাপাড়ার পশু চিকিৎসক প্রলয় মণ্ডল এবং বন্যপ্রাণী রক্ষক পার্থসারথি সিনহা এবং অন্য কর্মীরা বাঘটিকে সুস্থ করে তোলেন। তার নাম রাখা হয় রাজা। ২০০৮ সালের অগস্ট থেকে এই ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রেই ছিল সে।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসার সময় বাঘটির বয়স ছিল ১১ বছরের মতো। গত বছরের ২৩ অগস্ট বন বিভাগের তরফে রাজার ২৫ তম জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাজাই ছিল শেষ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। আধিকারিকরা বলছেন, সার্কাস থেকে বাজেয়াপ্ত করে খয়েরবাড়িতে ১৮টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আনা হয়েছিল। ৪টি বাঘ দার্জিলিং পদ্মজা নাইডু চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়। বাকিগুলি জলদাপাড়াতেই ছিল। ধাপে ধাপে বাঘগুলি মারা যায়। একমাত্র জীবিত ছিল রাজা। সেও আজ মারা গেল। রাজাকে দেখার জন্য দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে পর্যটকদের ঢল নামত। এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণ রাজার মতোই ছিল বলে আধিকারিকরা মন্তব্য করেন।
বনবিভাগের আধিকারিকরা বলছেন, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সাধারণত ২০ বছরের বেশি বাঁচে না। রাজা ২৫ বছরের বেশি বেঁচেছিল। পশ্চিমবঙ্গে এর আগে কোনও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এতদিন বাঁচেনি বলে তাঁরা বলেন। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও দীপক এম বলেন, “কয়েকদিন ধরে রাজা অসুস্থ ছিল। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের পশু চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, তাকে বাঁচানো গেল না। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু।”
আজ রাজার মৃত্যুতে দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মী-আধিকারিকরা ভেঙে পড়েন। আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা ও ডিএফও দীপক এম রাজার মৃতদেহে ফুল দেন। ময়নাতদন্তের পর তার দেহ পোড়ানো হয়। চিতায় ফুল, মালা দিয়ে রাজাকে শেষ বিদায় জানান আধিকারিকরা।