আলিপুরদুয়ার: হাতে সাদা খাতা। পেনসিল দিয়ে নিজের নাম লেখার চেষ্টা করছে পার্বতী,আকাশ,দেবরা…। একবার লিখছে। একবার রবার দিয়ে ঘষে তুলছে। ফের লেখার চেষ্টা করছে ওরা। কিন্তু পারছে না। অথচ ওরা পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। তারপরও মাতৃভাষায় নিজের নাম লেখা রপ্ত করতে পারেনি। না এই কথা শুধু টিভি৯ বাংলার ক্যামেরাতেই ধরা পড়েছে এমনটা নয়। অভিভাবকরাও একই অভিযোগ করছেন। বলছেন, স্কুলে তো ঠিকমতো পড়াশোনাই হয় না।
আলিপুরদুয়ার জেলার বিবেকানন্দ ২ গ্রামপঞ্চায়েতের উত্তর জিৎপুর গ্রাম। সেখানে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের অরণ্য ঘেষা আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার পশ্চিম জিৎপুর অ্যাডিশনাল প্রাইমারি স্কুলের ঘটনা। এক সময় এখানে পড়ুয়া সংখ্যা ছিল ১৬৫। আর এখন ৬। আবার খাতায় কলমে শিক্ষকের সংখ্যা ১৪। অথচ তাঁরা চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াকে এখনও নামের বানান লেখাটুকু শিখিয়ে উঠতে পারেননি? প্রশ্ন উঠছে।
অভিভাবকদের স্কুল নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ। তাঁদের দাবি, শিক্ষকরা ঠিকমতো পড়াশোনা করান না। সেই কারণে এই হাল। পড়ুয়া সংখ্যা কমতে কমতে ৬ হয়েছে। এক এক করে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে স্কুল। অভিভাবক সাবিত্রী মুর্মু বলেন, “ওদের গাফিলতিতে স্কুলের এই হাল। পড়াশোনা ভাল হয় না। আমার বাচ্চা এখও নাম লিখতে পারে না। ক্লাস ফোরে পড়ে। আমরা চাইছি স্কুল ভাল হোক।” তবে শিক্ষকদের সাফাই তাঁরা নিজের চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখেনি। স্কুল শিক্ষক দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, “ওরা তো ছোট। ভুল হবেই। নাম ঠিকই লিখেছে। টাইটেলটা ভুল করেছে।”
এই ঘটনায় ডিপিএসসির চেয়ারম্যান পরিতোষ বর্মণ বলেন, “ঘটনাটি দুঃখের ও লজ্জার। অবিলম্বে স্কুলের বিষয়টি নিয়ে এসআই-কে দিয়ে পর্যবেক্ষন করাব। খতিয়ে দেখব।” বস্তুত, আলিপুরদুয়ারে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৮৪০ টি। তারমধ্যে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় রয়েছে প্রচুর স্কুল। আর আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার এই হাল কার্যত ভাবাচ্ছে শিক্ষাবিদদের।