উত্তর ২৪ পরগনা: একুশের ভোটে বাংলা দখলকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। এই লক্ষ্যে রাজ্যের শাসক-বিরোধী দুই শিবিরের কাছেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মতুয়া ভোট। সেই ভোট নজরে রেখে এবং নাগরিকত্ব ইস্যুতে মতুয়াদের ক্ষোভ প্রশমনে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেই উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে সভা করতে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শনিবার অমিত-সফরের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। এদিন তিনি জানান, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে তিনটেয় ঠাকুরনগরে সভা করতে আসছেন অমিত শাহ।
গত ৩০ জানুয়ারি ঠাকুরনগরের অমিত শাহের সভা করার কথা ছিল। নাগরিকত্ব ইস্যুতে অমিত শাহ কী বার্তা দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু দিল্লিতে ইজরায়েলি দূতাবাসের সামনে বিস্ফোরণের জেরে সেবার সফর বাতিল করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শাহ না আসার বিষয়টি চূড়ান্ত হতেই শান্তনু ঠাকুরের বাড়িতে ছুটে যান বাংলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়। এদিকে অমিত শাহের সভা বাতিলের প্রেক্ষিতে প্রচারে নেমে পড়ে তৃণমূল। মতুয়াদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরেন তাঁরা। একদিকে, সিএএ বাস্তবায়িত না হওয়া এবং অন্যদিকে তৃণমূলের প্রচারের ফলে চাপ বাড়ছিল বঙ্গ বিজেপির অন্দরে। তাই শনিবারই দিল্লি থেকে ফিরে সাংবাদিক বৈঠক করে অমিত শাহের সভার দিন ও সময় ঘোষণা করলেন সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তিনি জানালেন, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারিই ঠাকুরনগরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ‘অনেক হয়েছে মমতা, পরিবর্তন চাইছে জনতা’, রথ যাত্রার শুরুতেই নাড্ডার হুঙ্কার
এর আগে নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে দলের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ। এরপরই তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও জোর জল্পনা তৈরি হয়। তবে কিছুদিন আগে মুকুল রায়কে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁর তৃণমূলের যোগ দেওয়ার জল্পনায় জল ঢালেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের এই নেতা স্বয়ং। তিনি জানান, যে দল সিএএ সমর্থনই করে না, তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকেও সিএএ নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী শোনায় শান্তনুকে। তাঁর দাবি, ঠাকুরনগরে এসে মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে কোনও সদর্থক বার্তাই দেবেন অমিত। নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবি সম্পর্কে তাঁর মত, যাঁরা ধর্মীয় কারণে দেশত্যাগ করে ভারতে ঠাঁই নিয়েছিলেন তাঁদের কাছে কাগজপত্র থাকবে কী করে?
এদিন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও ঝাঁঝালো আক্রমণ করেন শান্তনু ঠাকুর। তাঁকে এক প্লাটফর্মে এসে কাজ করার আবেদন জানিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। এ নিয়ে বিজেপি সাংসদের কটাক্ষ, “উনি আশা করেন কী করে যে ওনার মতো লোকের হাত ধরে আমরা রাজনীতি করব!” পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের দলবদলের কথা উল্লেখ করে বিজেপি সাংসদ বলেন, যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তাতে দু’দিনের মধ্যে উনিও হয়ত যোগ (বিজেপিতে) দেবেন।
উল্লেখ্য, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজ্যের ১২০টি বিধানসভা আসনে মতুয়াদের প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি ৩০টি আসনে নিয়ন্ত্রক তাঁরাই। এই পরিস্থিতিতে মতুয়া ভোট নিজেদের কাছে টানতে মরিয়া শাসক-বিরোধী দুই শিবিরই। এই প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারিতে অমিত শাহের ঠাকুরনগর সভার দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের