প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: কালী পুজো নিয়ে তাঁর আগ্রহ সর্বজনবিদিত। একমাত্র বীরভূম জেলা তৃণমূল দফতরেই রয়েছে কালী প্রতিমা। দলীয় দফতরের কালী প্রতিমাকে সোনায় কার্যত মুড়ে ফেলেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। এতদিন নিজের হাতে গয়না কালীকে পরাতেন তিনি। দেবীকে সাজাতেন। কিন্তু এবার আর সেই সুযোগ নেই অনুব্রতের। শোনা যাচ্ছে, সেই কারণেই মন খারাপ কেষ্টর।
প্রতিমার সামনে আরাধনার সুযোগও নেই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির। বর্তমান ঠিকানা আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারে যে আর কালী পুজো হয় না! আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারের মধ্যে হাসপাতাল ওয়ার্ডের অদূরেই রয়েছে একটি মন্দির। যেখানে অবশ্য প্রতিমা নেই। আছে টাইলসের গায়ে থাকা দেবতা মূর্তি। আছে কালীর ছবি। প্রতিমার পরিবর্তে সেই ছবিতে মালা দেওয়া ছাড়া আর কোনও সুযোগ নেই দাপুটে কেষ্টর।
পুজোর জন্য ওই চার বাই চার ফুটের মন্দিরের রং শনিবার শেষ করেছেন বন্দিরাই। আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারের হাসপাতালই এখন ঠিকানা অনুব্রতর। সেখান থেকে বাইরে খুব কম বেরোন না তিনি। এমনিতেই বাইরে বেরোতে গেলে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয় কেষ্টকে। তাই বাইরে না বেরিয়ে হাসপাতাল ওয়ার্ডেই অন্যদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মাঝেমধ্যে একবারেই চুপ করে থাকেন। এভাবেই চলছে তাঁর সময়।
শারীরিক নানা সমস্যা রয়েছে অনুব্রতর। খাওয়াদাওয়াতেও নানা বাধানিষেধ রয়েছে। তাই সারাদিনে মাত্র ৩৫ গ্রাম চালের ভাত খান। আর সঙ্গে হালকা তরকারি, হালকা মাছের ঝোলই বেশিরভাগ দিনের সঙ্গী। সংশোধনাগারের দেওয়া মাংস খান না অনুব্রত। আর হাসপাতাল ওয়ার্ড ঠিকানা হওয়ায় খাবারে আলাদা ডায়েট থাকে তাঁর। ফল, দুধ, ডিম নিয়মিত থাকে অনুব্রতের খাবারের তালিকায়।
বাইরে দাপুটে অনুব্রতর সঙ্গে অবশ্য এই অনুব্রতকে একেবারেই মেলাতে পারছেন না সংশোধনাগারের কর্মীরা। বরং যাঁর নামে বীরভূমে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত রীতিমতো, তাঁর এই অমায়িক ব্যবহারে কার্যত স্তম্ভিত তাঁরা। সংশোধনাগারের রক্ষীরাই বলছেন, “যা শুনেছি বা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, তার সঙ্গে অনুব্রতবাবুর কোনও মিল নেই দেখছি।” একইসঙ্গে তাঁদের কারও কারও সংযোজন, “ভদ্রলোক বাইরে যেমনই হন। ভেতরে কিন্তু নিয়ম মেনেই চলছেন। অন্যায় আবদার তেমন কিছু আজ অবধি করেননি।” তবে এবারের কালীপুজোটা যে তাঁর ফিকেই যাবে। মন্দিরের গায়ে টাইলসের কালীর ছবিতেই এবার বিশেষ দিনটা কাটবে তাঁর।