বাঁকুড়া: হাসপাতালে সুপারিন্টেডেন্ট পদ ছ’বছর ধরে খালি। চিকিৎসক থাকার কথা ৪৪ জন। আছেন মাত্র ষোলো জন। বহু বিভাগে একজন চিকিৎসকও নেই। নার্সিং কর্মীও কমতে কমতে অর্ধেকে ঠেকেছে। এক তৃতীয়াংশ টেকনিশিয়ান ও নামমাত্র গ্রুপ ডি কর্মী রয়েছে। এই অবস্থায় কার্যত ‘খুঁড়িয়ে’ হাঁটছে বড়জোড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা। বস্তুত, সোমবার হুগলির সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অকোপট বলেছেন, “বড় বড় হাসপাতাল রেডি আছে। তবে ডাক্তার নেই।” এবার সেই একই প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ল বাঁকুড়ায়।
রাজ্যে সরকার পালা বদলের পর জেলায় জেলায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে ওঠে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাঁকুড়ার বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলে গড়ে ওঠে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বিশাল বিল্ডিং। ঝাঁ চকচকে হাসপাতালে আনা হয় নামী দামি যন্ত্রপাতি। বড়জোড়া, সোনামুখী ও গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ ভেবেছিলেন এবার হয়তো আর ছোটখাটো চিকিৎসার জন্য দৌড়াতে হবে না প্রায় ৪০ কিমি দূরের বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে এলাকার মানুষের।
কারণ সুপার স্পেশালিটি নাম দেওয়া সেই হাসপাতালে সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা তো দূর ন্যুনতুম চিকিৎসা টুকুও মেলেনা বলে অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালে মোট ৪৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা। সেই জায়গায় চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১৬ জন। হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্টের পদই খালি পড়ে রয়েছে গত ছ’বছর ধরে। হাসপাতালের অর্থোপেডিক, ডার্মাটোলজি, রেডিও ডায়াগনোসিস, সিসিইউ, ব্লাড ব্যাঙ্ক ও সাইকিয়াট্রি বিভাগে একজন চিকিৎসকও নেই। তবে শুধু চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে এমন নয়, টেকনিশিয়ান পদেও বিপুল ঘাটতি রয়েছে। হাসপাতালে ৪০ জন টেকনিশিয়ান থাকার কথা থাকলেও টেকনিশিয়ান রয়েছে মাত্র ১৮ জন। ওটি টেকনিশিয়ান নেই একজনও। নার্সিং কর্মীর ক্ষেত্রেও ঘাটতির সংখ্যা চোখে পড়ার মতো।
১৬৬ জন নার্স থাকার কথা অথচ আছে মাত্র ৯৪ জন। সাফাই কর্মী ও অন্যান্য কর্মী ১৩৩ জন থাকার কথা। রয়েছে মাত্র ৫৩ জন। চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, নার্সিং কর্মী ও গ্রুপ ডি কর্মীর এই বিপুল ঘাটতিতে লাটে উঠেছে পরিষেবা। ফলে সুপার স্পেশালিটি নামের ওই হাসপাতালে ন্যুনতম চিকিৎসা পরিষেবাটুকুও মিলছে না। অগত্যা এলাকার মানুষকে নূন্যতম চিকিৎসাটুকু পেতেও ছুটে যেতে হচ্ছে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, চিকিৎসক সহ অন্যান্য কর্মীর এই ঘাটতির কথা বারেবারে স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনও সদুত্তর মেলেনি। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এমন বেহাল পরিষেবার জন্য রাজ্যের শাসক দল ও সরকারের সদিচ্ছাকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধীরা। শাসক দল তা মানতে নারাজ।