বাঁকুড়া: স্কুলে গ্রুপ ডি নিয়োগের জন্য দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে তৃণমূল নেতার নামে পোস্টার পড়ল বাঁকুড়ায়। বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লকের পাতালখুরি গ্রামের স্কুলের সামনে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে হাতে লেখা ওই পোস্টার দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। পোস্টারে টাকা ফেরত চাওয়া হয়েছে। তা না হলে মুখ খোলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে নিযুক্ত ‘গ্রুপ ডি’ কর্মীদের একটা বড় অংশের চাকরি যায়। সেই তালিকায় নাম ছিল পাতালখুরি গ্রামের তৃণমূল বুথ সভাপতি আদেশ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ভাই উত্তম চট্টোপাধ্যায়ের। অভিযোগ ওঠে, তৃণমূলের নেতা আদেশ চট্টোপাধ্যায় নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে শুধু নিজের ও নিজের ভাইয়ের ‘গ্রুপ ডি’র চাকরি পেয়েছিলেন। তাই নয় এলাকার আরও একাধিক চাকরিপ্রার্থীর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এবার পোস্টার পড়ায় সেই অভিযোগেই যেন সিলমোহর পড়ল। পোস্টারে আদেশ চট্টোপাধ্যায়ের নাম করে লেখা হয়েছে চাকরি দেওয়ার নাম করে পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা। চাকরির আর দরকার নেই। দেওয়া টাকা অবিলম্বে ফেরৎ না দিলে মুখ খোলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে পোস্টারে।
মঙ্গলবার সকালে পোস্টারটি নজরে আসতেই এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। আদেশ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর পরিবারের দাবি, আদেশ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তৃণমূলের দাবি এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। দল এই ধরনের দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ও দেয় না। বিরোধীরা এখন ঘোলা জলে মাছ ধরতেই এমন পোস্টার ফেলছে। বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি পোস্টার পড়েছে। দল এর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে দল বরদাস্ত করবে না। দল জিরো টলারেন্সে কাজ করছে।”
বিজেপি স্পষ্টতই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের নেতা কর্মীদের কাছ থেকেই চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছেন। এখন চাকরি যাওয়ায় তাঁরাই টাকা ফেরৎ চেয়ে এমন পোস্টার ফেলছেন। বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা বলেন, “যাঁরা টাকা দিয়েছে, তাঁরা সবাই অশিক্ষিত নন। অনেকে লেখাপড়া করেও চাকরি পাননি। তখন তাঁদেরই বাবামা জমি জায়গা বিক্রি করে তৃৃণমূল নেতাকে টাকা দিয়েছিলেন।”
প্রসঙ্গত, ওএমআর শিট জালিয়াতি করায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Gangopadhyay) নির্দেশে ১৯১১ জনের চাকরি গিয়েছে। বাঁকুড়া জেলাতেও এই চাকরি বাতিলের তালিকায় অনেকের নাম রয়েছে। সেই তালিকায় নাম ছিল বাঁকুড়ার পাতালখুড়ির তৃণমূল বুথ সভাপতি আদেশ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর দাদা উত্তম চট্টোপাধ্যায়ের নাম। তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই অবশ্য তাঁদের হদিশ মিলছে না।