বাঁকুড়া: বিদ্যালয় নাকি ভগ্নস্তুপ বোঝা দায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ক্লাসরুমের অবস্থা বেহাল। ছাদের চাঙড় ভেঙে ভেঙে পড়ছে। অভিযোগ, বারেবারে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও হাল ফেরেনি। অগত্যা দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বারান্দায় পড়ুয়াদের বসিয়ে চলে পঠন-পাঠন থেকে মিড ডে মিলের খাওয়া দাওয়া। স্কুলে সন্তানদের পাঠিয়েও নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন না বাবা-মায়েরা।
বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের খয়েরবনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি ক্লাস মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০৩ জন। স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হারও ভাল। প্রায় দিনই স্কুলে উপস্থিত থাকে ৯০ থেকে ৯৫ জন পড়ুয়া। পঠন পাঠনের জন্য দুজন শিক্ষকও রয়েছে। পড়ুয়াদের মিড ডে মিলও দেওয়া হয়।
কিন্তু ক্লাসরুমের অভাবে ধুঁকছে স্কুলটি। প্রথমে দুটি ক্লাসরুম থাকলেও কয়েকবছর আগে আরও দুটি ক্লাসরুম তৈরি হয় স্কুলে। কিন্তু পুরনো ক্লাসরুমগুলি সংস্কারের অভাবে ক্রমশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে বসেছে। পুরনো ক্লাসরুম দুটিতে ছাদের থেকে প্রায়শই খসে পড়ছে সিমেন্টের চাঙড়। দেওয়ালের অবস্থাও তথৈবচ।
যে কোনও দিন দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে নতুন দুটি ক্লাসরুমের পাশাপাশি একাধিক ক্লাসের পড়ুয়াদের কখনো স্কুলের বারন্দায় আবার কখনো গাছের তলায় বাঁধানো বেদীতে বসিয়ে ক্লাস করাতে বাধ্য হন শিক্ষকরা। আবহাওয়া বিরূপ হলে তখনই দেখা দেয় সমস্যা। বারান্দা বা গাছের তলার বাঁধানো বেদীতে তখন ক্লাস করা যায় না। অগত্যা কিছুটা ভাল অবস্থায় থাকা দুটি ক্লাসরুমেই গাদাগাদি করে পড়ুয়াদের রেখে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।
একাধিক ক্লাসের পড়ুয়ারা একটি ক্লাসরুমে গাদাগাদি করে থাকায় পঠন পাঠন লাটে ওঠে। শিক্ষকদের শত চেষ্টার পরেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারেন না অভিভাবকরা। খেলাচ্ছলে ধংসপ্রায় ক্লাসরুম দুটিতে মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়ে খুদে পড়ুয়ারা। ফলে যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। সেই আশঙ্কায় স্কুলে পড়ুয়াদের পাঠিয়েও নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন না অভিভাবকরা। অভিভাবকদের দাবি স্কুল শিক্ষা দফতরের টালবাহানাতেই স্কুলটির হাল এমন।
স্কুলের পরিকাঠামোগত এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্কুলের প্রধানশিক্ষকও। তিনি বলেছেন, স্কুলের অবস্থা সত্যি খারাপ। এখানে ছোট শিশুরা পড়াশোনা করে। দ্রুত বিদ্যালয় ঠিক না করতে সমস্যায় পড়তে হতে পার। জেলা স্কুল পরিদর্শকের জগবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বিষয়টি তাঁদের নজরে রয়েছে। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না হওয়া পর্যন্ত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো ছাড়া তাঁদের আর কিছু করার নেই।