বাঁকুড়া: প্রায় দশ বছর আগে একটি সরকারি অনুষ্ঠান থেকে ভূমিহীন বাসিন্দাদের হাতে পাট্টা তুলে দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বপ্ন দেখেছিলেন এবার নিজের জমির উপর একটা বাড়ি হবে। কিন্তু কোথায় কী! অভিযোগ, এতগুলো বছর কেটে গেলেও মেলেনি জমি। ফলত ক্ষুব্ধ ভূমিহীনরা। চাইছেন জমি দিক সরকার নাহলে ফিরিয়ে নিক তাঁদের হাতে দেওয়া নথি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
সালটা ২০১৩ ও ২০১৬। সেই সময় বাঁকুড়া জেলায় পৃথক দু’টি সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে ঘটা করে বেলিয়াতোড়ের মোট ১৮ জন ভূমিহীনের হাতে সরকারি পাট্টার জমির নথিপত্র তুলে দেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জমির এই পাট্টা তুলে দেওয়ার আগে সরেজমিনে কয়েকদফা সমীক্ষা করা হয়। ভূমিহীন উপভোক্তাদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি ঠিক কোন এলাকায় জমি দেওয়া হবে তা চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াও সেরে ফেলা হয়।
এরপর ভূমিহীনদের হাতে পাট্টার নথি হিসাবে যে বন্দোবস্তপত্র তুলে দেওয়া হয় তাতে স্পষ্ট উল্লেখ থাকে মৌজার নাম, জে এল নম্বর, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর ও জমির পরিমাণ। যে ১৮ জন ভূমিহীন পরিবারের হাতে পাট্টার নথি তুলে দেওয়া হয়েছিল তাতেও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু গোল বাধে পাট্টা প্রাপকরা ওই জমির দখল নিতে গেলে। অভিযোগ, যে সরকারি জমির পাট্টার নথি তাঁদের দেওয়া হয়েছিল সেই জমি আগে থেকেই বেদখল হয়ে গিয়েছে নাকি। ফলত, বাস্তবে জমির দখল নিতে পারেননি পাট্টা প্রাপকরা।
নিজেদের জমি পাওয়ার আশায় গত দশ বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও শাসক দলের নেতাদের দরজায় দরজায় বিস্তর ছোটাছুটি করেছেন ওই আঠারোটি পরিবার। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি বলে দাবি তাদের।
ফলত, এতদিন পরেও জমি না পাওয়ায় এবার পথে নেমেছেন ভূমিহীনরা। তাদের সাফ কথা ‘হয় জমি দাও, নাহলে নথি ফেরত নাও’ পাট্টা প্রাপক শান্তি মুখোপাধ্যায় বলেন, “২০১৩ সালে পাট্টা পেয়েছিলাম। এখনও চোখে দেখিনি জমি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। ডিএম সাহেবও দেখেছেন। তবে এখনও জমি পাইনি। যদি জমি না পাই তাহলে আমাদের নথি দিয়ে দিক।”
ভূমিহীনদের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে পথে নেমেছে বিজেপি। পরিবারগুলির হয়রানির জন্য কাঠগড়ায় তুলেছে শাসক দল তৃণমূলকে। তাদের মদতেই ভূমিহীনদের দেওয়া জমি জবরদখল করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি বিষয়টি তাঁদের জানাই ছিল না। জানার পর দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। বিজেপি নেতা সোমনাথ কর বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দেন। কাজের কাজ কিছুই করছেন না। উনি ভাতার রাজনীতি করছেন শুধু।” অপরদিকে তৃণমূল বিধায়ক, বড়জোড়ার অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যাঁদের পাট্টা দিয়েছেন তাঁরা সকলে জমি পেয়েছেন। তবে এটা ব্যতিক্রম। আমি খতিয়ে দেখব বিষয়টি।”