বাঁকুড়া: চার চাকা গাড়িতে চড়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন পরিবার নিয়ে। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ছুটছে গাড়ি। অথচ পেট্রল বা ডিজেলের জন্য খরচ হচ্ছে না একটি টাকাও। নিদেন পক্ষে বিদ্যুতের খরচও হচ্ছে না। অবাক হচ্ছেন? সৌরবিদ্যুৎ চালিত এমনই এক গাড়ি তৈরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মনোজিৎ মণ্ডল।
ছোট থেকেই অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারে ঝোঁক ছিব বাঁকুড়ার বাসিন্দা মনোজিতের। পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসার ক্ষেত্র হিসাবেও তিনি বেছে নেন ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবসাকে। তবে শুধু ব্যবসা নয়,বিনা জ্বালানি খরচে গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা মাথায় চেপে বসে মনোজিতের। হাজার কুড়ি টাকা খরচ করে একটা পুরানো ন্যানো গাড়ি কিনে লেগে পড়েন কাজে।
গাড়ির পেট্রল ইঞ্জিন খুলে সেখানে বসিয়ে দেন বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা ইলেক্ট্রিক মোটর। গিয়ারের ব্যবস্থা অক্ষুন্ন রেখে গাড়ির ওজন হালকা করতে বাদ দেন ক্লাচ সিস্টেম। ৭২ ভোল্টের ব্যাটারি বসিয়ে গাড়ির ছাদে বসিয়ে দেন সোলার প্যানেল। এই প্যানেলের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জের ব্যবস্থা করা হয়।
এরপর ১৯ দিন ধরে লাগাতার ভাবে গাড়ির খোলনলচে বদল করে শেষ পর্যন্ত রাস্তায় সফল ভাবে চলতে শুরু করে মনোজিৎ মণ্ডলের সাধের গাড়ি। তাঁর দাবি গাড়িটি সারাদিনে ৬ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখলেই ফুল চার্জ হয়ে যাবে ব্যাটারি। একবার ফুল চার্জ হয়ে গেলে চালক সহ পাঁচ জনকে চাপিয়ে কমপক্ষে একশো কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারবে গাড়িটি। গাড়ি রাস্তায় চলার সময়ও ব্যাটারি লাগাতার ভাবে চার্জ হতে থাকবে।
সূর্যালোকে ব্যাটারি চার্জ হওয়ায় এই গাড়ির দূষণের মাত্রা একেবারে শূন্য। মেঘলা দিনের কথা মাথায় রেখে গাড়িটিতে ব্যবহৃত ব্যাটারি চার্জ করার বিকল্প ব্যবস্থাও রেখেছেন মনোজিৎ। যথেষ্ট সূর্যালোক না পেলে বিদ্যুতের প্লাগে তার গুঁজেও চার্জ করা যাবে ব্যাটারি। মনোজিতের দাবি সূর্যালোকে ব্যাটারি চার্জ হলে গাড়ি কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ছুটলেও গাড়ির মালিকের খরচ হবে শূন্য।
কিন্তু বিদ্যুতে ব্যাটারি চার্জ করলে একশো কিলোমিটার যেতে খরচ হবে মাত্র ৩৬ কিলোমিটার। মনোজিতের দাবি এই গাড়ির মেইনটেনেন্স খরচ একেবারে শূন্য। প্রাথমিক ভাবে এই গাড়ি তৈরি করতে মনোজিতের খরচ হয়েছে দেড় লক্ষ টাকার আশপাশে। গাড়ির যান্ত্রিক কিছু অংশ যোগ করে বানিজ্যিক ভাবে গাড়িটি উৎপাদন করতে খরচ হবে ২ লক্ষ টাকার আশপাশে। মনোজিতের দাবি মধ্যবিত্তের হাতে স্বল্প মূল্যের এই গাড়ি তুলে দিতে পারলে একদিকে যেমন মধ্যবিত্তের নিজস্ব চার চাকা গাড়ির স্বপ্নপূরণ হবে তেমনই বিনা খরচে মানুষ তাঁর চার চাকার প্রয়োজন মেটাতে পারবে। দূষণ না হওয়ায় পরিবেশও থাকবে ভাল।
মনোজিৎ মণ্ডল বলেন, “এই গাড়িটি আমার বাড়িতেই ছিল। নর্মাল ব্যাটারি ছিল। প্রতিদিন যেভাবে পেট্রলের দাম বাড়ছে, তাতে পকেটে চাপ পড়ছিল। তাই পকেটের চাপ কমানোর জন্যই এই উদ্যোগ আমার।”