বাঁকুড়া: লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। কিন্তু বাঁকুড়ার রামকানালী গ্রামে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোয় যে দেবীমূর্তির আরাধনা করা হয় সেখানে লক্ষ্মীর বাহন হাতি। স্বয়ং বিশ্বকর্মার বাহন রামকানালী গ্রামে লক্ষ্মীর বাহন হয়ে ওঠার পিছনে অবশ্য রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস।
অতীত বলছে
রামকানালী গ্রামের চারিদিক ঘন জঙ্গলে ঢাকা। গ্রাম থেকে যেদিকেই যাওয়া হোক না কেন রাস্তায় পড়ে পিড়রাবনির জঙ্গল। আজ থেকে একশো বছর আগে গ্রামের প্রান্তে থাকা জঙ্গল আরও ঘন ছিল। সেই জঙ্গলেই ঘাপটি মেরে বসে থাকত বুনো হাতি। রাত নামলেই জঙ্গল থেকে সেই হাতির দল হানা দিত ফসলের জমিতে। রাতভর জমির ধান সাবাড় করে জঙ্গলে ফিরে যেত হাতির দল। মাঝে মধ্যে খাবারের খোঁজে গ্রামে ঢুকে বাড়ি ঘর তছনছ করে দিত হাতির দল। হাতির হানায় চূড়ান্ত ক্ষতির মুখে পড়তে হত গ্রামের কৃষিজীবী প্রায় দুশো পরিবারকে। হাতির হাত থেকে মা লক্ষ্মী রূপী জমির ফসলকে রক্ষা করার তাগিদেই একই সঙ্গে লক্ষ্মী আর গজরাজকে পুজো শুরু করেন রামকানালী গ্রামের মানুষ।
কোজাগরী পূর্ণিমার দিন হাতির পিঠে চড়া লক্ষ্মী আরাধনা শুরু হয় গ্রামে। আদর করে লক্ষ্মীর নাম রাখা হয় গজলক্ষ্মী। তারপর ১২৩ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু আজও গজলক্ষ্মীর পুজো প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পায় জঙ্গলঘেরা রামকানালী গ্রামে। আজ গ্রামের প্রান্তে থাকা পিড়রাবনির জঙ্গল দলমা থেকে বাঁকুড়ায় আসা হাতির দলের কাছে হট ফেভারিট। এখন বছরে প্রায় ছ’মাস ধরে এই জঙ্গলে থেকে যায় হাতির দল। এখনও হাতির দলের হানায় গ্রামের মানুষের ফসল ও বাড়ি ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রতি বছর। হাতির হানা থেকে নিজেদের ফসল ও বাড়ি ঘর রক্ষা করতে গ্রামবাসীরা ভরসা রাখেন গজলক্ষ্মীর উপরেই। তাই কোজাগরী পুজো এলেই রামকানালী গ্রামে শুরু হয় গজলক্ষ্মী পুজোর আয়োজনের ব্যস্ততা।
পুজোর সময় গ্রামের আট থেকে আশি সকলেই ভক্তিভরে গজলক্ষ্মীর আরাধনা করে লক্ষ্মী লাভের কামনা জানানোর পাশাপাশি গজরাজের হাত থেকে ফসল রক্ষার আবেদন জানান। গ্রামে দুর্গাপুজা না থাকায় এই লক্ষ্মীপুজোকে ঘিরেই আবর্তিত হয় গ্রামের মানুষের উৎসবের যাবতীয় উন্মাদনা।