বাঁকুড়া: এক সময় নাকি আবির্ভূতা হয়েছিলেন খোদ জগদ্ধাত্রী। স্বপ্নে এসেছিলেন সারদা দেবীর মা শ্যামাসুন্দরী দেবীর কাছে। রক্তবর্ণা দেবীকে চিনতে পেরে তারপর থেকে শুরু হয়েছিল পুজো। পরে মা সারদাও সেই পুজো চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। দেড়শো বছর পেরলেও জয়রামবাটির মা সারদার জন্মভিটের সেই পুজো আজো অমলিন।
সালটা ১৮৭৭। বাঁকুড়ার জয়রামবাটি গ্রামে তখন মহা ধুমধামে হত কালীপুজো। সে সময় পুরোহিত ছিলেন নব মুখুজ্যে। তিনি গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে কালীপুজোর জন্য নৈবেদ্য সংগ্রহ করতেন। এর জন্য গ্রামের মহিলারা সারা বছর নৈবেদ্য জমিয়ে রাখতেন। তবে এক বছর কালীপুজোয় কোনও এক অজানা কারণে নব মুখুজ্যে শ্যামাসুন্দরীদেবীর জমিয়ে রাখা নৈবেদ্য গ্রহণ করেননি। একরাশ অপমান আর গ্লানি নিয়ে কালী পুজোর রাতে সাজানো নৈবেদ্যর ডালার সামনে নিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি।
কথায় বলে, সে সময় রক্তবর্ণা এক নারীমুর্তি অবির্ভূতা হন শ্যামাসুন্দরী দেবীর সামনে। তাঁকে স্বান্তনা দিয়ে সেই তিনি বলেন, “কাঁদছ কেন মেয়ে। তোমার নৈবেদ্য কালী পুজোর জন্য নেয়নি তো কী হয়েছে! আমি তোমার নৈবেদ্য গ্রহণ করব”
শ্যামাসুন্দরী দেবী বুঝতে পারেন এই রক্তবর্ণা নারীমুর্তি আর কেউ নন স্বয়ং জগদ্ধাত্রী। এরপরই নিজের বাড়িতেই জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করেন তিনি। প্রথমে খুব ছোট আকারে আয়োজন করেন পুজোর। সময়ের সাথে সাথে সেই আয়োজন বাড়তে থাকে। শ্যামসুন্দরী দেবীর পরে মা সারদাও নিজের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাড়ির এই পুজো পরিচালনা করে এসেছেন। তাঁর মৃত্যুর পরও থামেনি সেই পুজো।
মাতৃমন্দিরের উদ্যোগে মা সারদার জন্মভিটের সেই পুজো এখনও চলে আসছে জয়রামবাটিতে। রীতি মেনে নবমী তিথিতেই সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমী এই তিন তিথির পুজো হয় এখানে। মাতৃ মন্দিরের ভক্ত সন্ন্যাসীরা এই পুজো করেন। চলতি বছরও মহা সমারোহে চলছে সেই মাতৃ আরাধনা। মা সারদার পবিত্র জন্মভিটের এই পুজো দেখতে দেশ বিদেশের বহু ভক্ত ও পূণ্যার্থী ভিড় জমিয়েছে জয়রামবাটিতে। ভক্ত সমাগমে উপচে পড়ছে জয়রামবাটি মাতৃ মন্দির।