Bankura : তৃণমূলের আতঙ্কে ২ বছর ঘরছাড়া শাসকদলেরই পঞ্চায়েত প্রধান-সহ ৮৭ জন

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঞ্জয় পাইকার

May 23, 2022 | 4:52 PM

Bankura : ঘরছাড়াদের বক্তব্য, দৈনিক যা রোজগার হচ্ছে তার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে বাড়ির ভাড়া মেটাতে। গ্রামে ফিরতে না পারায় মিলছে না রেশন। শিশুদের পড়াশোনাও বন্ধ রয়েছে।

Bankura : তৃণমূলের আতঙ্কে ২ বছর ঘরছাড়া শাসকদলেরই পঞ্চায়েত প্রধান-সহ ৮৭ জন
উলিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তাসমিনা খাতুন গ্রামছাড়া

Follow Us

বাঁকুড়া : রাজ্যে ক্ষমতায় তৃণমূল (Trinamool Congress)। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতও ঘাসফুলের দখলে। কিন্তু তৃণমূলেরই একাংশের আতঙ্কে দু’বছর ধরে ঘরমুখো হতে পারেননি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকের বেলিয়াড়া গ্রামের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরাই। তার মধ্যে রয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানও। ঘরছাড়াদের বক্তব্য, স্থানীয় ব্লক প্রশাসন, থানা থেকে শুরু করে দলের জেলা নেতৃত্ব সর্বত্র বারেবারে দরবার করেছেন। কিন্তু, আজও তাঁরা ফিরতে পারেননি গ্রামে।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর শাসকদলের সন্ত্রাসে বহু বিজেপি কর্মী, সমর্থককে ঘরছাড়া হতে হয়েছে বলে গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ। তবে বিষ্ণুপুর ব্লকের উলিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলিয়াড়া গ্রামের ছবি একেবারে আলাদা। ২০২০ সালে ২ অগস্ট তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন হন প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান শেখ বাবর আলি। খুনের ঘটনায় নাম জড়ায় উলিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান তাসমিনা খাতুনের স্বামী রহিম মণ্ডল ও তাঁর অনুগামীদের। পাল্টা হামলার আশঙ্কায় খুনের রাতেই পরিবার পরিজন নিয়ে ঘর ছাড়েন বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান সহ বেলিয়াড়া গ্রামের প্রধানের অনুগামী ত্রিশটিরও বেশি তৃণমূল কর্মীর পরিবার।

তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় দুই বছর। এখনও ৮৭ জন গ্রামে ফিরতে পারেননি। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামে ফেরার অনুমতি দেয়নি পুলিশ ও প্রশাসন। পঞ্চায়েত প্রধান গ্রাম পঞ্চায়েতে যেতে চাইলেও গত দুবছর ধরে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। গত দু’বছরে অভিযুক্তরা সকলেই জামিনে মুক্তি পেলেও নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। সেজন্য কেউ গ্রাম থেকে ১৮-২০ কিমি দূরে ঘরভাড়া নিয়ে রয়েছেন। কেউ রয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। তাঁদের বক্তব্য, আর্থিক কষ্টে দিন কাটছে। কেউ জিনিসপত্র ফেরি করে সংসার চালান। আবার কেউ অন্যের কাছ থেকে ভাড়ায় নেওয়া টোটো চালিয়ে কোনওরকমে দিন গুজরান করছেন। ঘরছাড়াদের বক্তব্য, দৈনিক যা রোজগার হচ্ছে তার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে বাড়ির ভাড়া মেটাতে। গ্রামে ফিরতে না পারায় মিলছে না রেশন। শিশুদের পড়াশোনাও বন্ধ রয়েছে।

পঞ্চায়েত প্রধান দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েত অফিসে যেতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা। উলিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তাসমিনা খাতুন বলেন, “প্রথমে ৩০০ জনের মতো ঘরছাড়া ছিলেন। এরপর জরিমানা দিয়ে অনেকে গ্রামে ফেরেন। কারও কাছে ১০ হাজার, কারও কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে।” বাইরে ঘরভাড়া নিয়ে থাকতে থাকতে মানসিক কষ্টে ভুগছেন অনেকে। পঞ্চায়েত প্রধান বলছেন, “দিন তিনেক আগে একজন আত্মহত্যা করেছেন। এতদিন বাইরে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।”

তিনি পঞ্চায়েত অফিসে যেতে চান। কিন্তু, অনুমতি পাচ্ছেন না জানিয়ে তাসমিনা খাতুন বলেন, “আমি পঞ্চায়েতে যেতে চাই। বিডিও বলছেন, পুলিশ অনুমতি দিলে ফিরবেন। আর পুলিশ বলছে, এখন ফিরবেন না। অশান্তি হতে পারে।” দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। বিভিন্ন শংসাপত্র দেওয়া-সহ পঞ্চায়েতের কাজ ভাড়াবাড়িতে থেকেই করতে হচ্ছে তাঁকে।

তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। বৈঠকও হয়েছে অনেকবার। সকলকে একসঙ্গে ঘরে ফেরালে গন্ডগোল হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ। যারা নির্দোষ, তাদের সবাইকে ফেরানো হচ্ছে। দোষীদের নিয়ে আদালত ও প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।” পুলিশ ও প্রশাসন এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায়নি।

ঘরছাড়াদের কেউ কেউ বীরভূমের বগটুইয়ের ঘটনা স্মরণ করে শিউরে উঠলেন। তবে তাঁদের আশা, পুলিশ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েই গ্রামে ফেরাবে। ২ বছর পরও এই আশায় বুক বাঁধছেন ঘরছাড়ারা।

Next Article