বাঁকুড়া: কাকা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। অভিযোগ, সেই প্রভাব খাটিয়েই নাকি চাকরি পেয়েছিলেন ভাইপো। কিন্তু আদালতের কাছে সেসব জারিজুরি খাটেনি। শনিবারই হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি খুইয়েছেন বাঁকুড়া-২ নম্বর ব্লকের তালাডাং গ্রামের বাপি বাউরি। বাপির কাকা গুইরাম বাউরি স্থানীয় বিকনা গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য। অভিযোগ, সেই প্রভাবই কাজে লাগান বাপি। যদিও গুইরামের দাবি, এসবের বিন্দু বিসর্গ তিনি জানেন না। বলেন, কী ওএমআর শিট আর তা কীভাবে যে কারচুপি করা যায়, এসব বোঝেনই না তিনি। সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি খুইয়েছেন গ্রুপ সি-র ৮৪২ জন। সেই তালিকার ১১৯ নম্বরে বাপি বাউরির নাম রয়েছে বলেই অভিযোগ।
তালাডাংয়ের বাসিন্দা বাপি এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসাবেই পরিচিত। যদিও এখন দলের নেতারা বলছেন, এমন নামে কাউকে তাঁরা চেনেন না। বাঁকুড়া-২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি বিধান সিংয়ের সঙ্গে বিভিন্ন সময় তাঁর ছবিও রয়েছে। বাপির কাকা গুইরাম তৃণমূল পরিচালিত বিকনা গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য। ২০১৭ সালে বাপি কাঞ্চনপুর হাইস্কুলে চাকরি পান। অভিযোগ, এই চাকরির মাপকাঠি যোগ্যতা নয়, স্বজনপোষণ ছিল।
যদিও কাকা গুইরাম বাউরি এ নিয়ে বলেন, “সম্পর্কে আমার ভাইপো হয়। কিন্তু খুব ভাল সম্পর্ক, এরকম একেবারেই নয়। ও চাকরি কীভাবে পেয়েছে সেসব আমি জানি না। আমি কিছুই জানি না। আমার নাম ভাঙিয়ে চাকরি পেয়েছে, এসব কথার অর্থই নেই। ভাইপো কোন দল করে আমি জানি না।”
বাপি বাউরির বাড়িতে গিয়ে তাঁর দেখা মেলেনি। টেলিফোনেও তিনি সাড়া দেননি। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে তাঁরা কিছু জানেন না। বাপি বাউরির স্কুলে গিয়েও তাঁর দেখা মেলেনি। কাঞ্চনপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রীতিশ নায়েক বলেন, “ক্লার্ক হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন বাপি। তিনি শাসকদলের ঘনিষ্ঠ কি না সেটা তো আমি বলতে পারব না। কারণ, স্কুলের ভিতরে কোনওদিন কেউ আসেননি। তবে আদালতের নির্দেশ তো মানতেই হবে। বাপি বাউরি যদি মনে করেন ঠিকমতো বিচার পাননি তাহলে তিনি ঠিক করবেন কী করবেন।”
এ বিষয়ে তৃণমূলের বাঁকুড়া-২ নম্বর ব্লক সভাপতি বিধান সিং বলেন, “বাপি বাউরির নাম আমি প্রথম শুনলাম। আমার সঙ্গে ছবি রয়েছে বলছেন আপনারা, তা হতেই পারে। কারণ নানা অনুষ্ঠানে যাই। তবে আমার ঘনিষ্ঠবৃত্তে কেউ নেই। যদি কেউ এভাবে চাকরি পেয়ে থাকে আইন-বিচার ব্যবস্থা তার সিদ্ধান্ত নেবে। এই নামে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও পদে বা সক্রিয় কর্মী কেউ থাকলে আমি নাম শুনে থাকতাম। এমনটা নয়। কারণ এই ব্লকটায় আমার চেনা সকলেই।”
যদিও বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্বেশ্বর সিংহ বলেন, “বাপি বাউরি তৃণমূল করে। ওর চাকরি গিয়েছে। যত জায়গায় যত তৃণমূল ঘনিষ্ঠ সব এভাবে চাকরি যাচ্ছে। প্রভাব খাটিয়ে সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছে। তাই আদালত বিচার করছে।”