‘শুধু দরকার আরও একটি সিলিন্ডার’, পরিষেবা দিতে সদা প্রস্তুত ‘অক্সিজেন দম্পতি’

tista roychowdhury |

May 27, 2021 | 11:04 AM

শান্তনুর যোগ্য সহধর্মিণী অনুস্মিতা বলেন, "আমি নিজে একজন নার্সিংয়ের ছাত্রী। মানুষের বিপদে তো আর চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারিনা। চেষ্টা করি যতটা সম্ভব সাহায্য করার।"

শুধু দরকার আরও একটি সিলিন্ডার, পরিষেবা দিতে সদা প্রস্তুত অক্সিজেন দম্পতি
নিজস্ব চিত্র

Follow Us

জলপাইগুড়ি: করোনা সংক্রমণ রুখতে ওঁরা সাক্ষাৎ যেন ‘কল্পতরু’। এলাকায় করোনা আক্রান্তের খবর পেলেই ছুটে যান সেখানে। তারপর রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছনো বা অক্সিজেন দেওয়া, সবই সারেন তাও বিনামূল্যে, স্বেচ্ছায়। জলপাইগুড়ির পাণ্ডাপাড়ার বাসিন্দা শান্তনু শর্মা ও অনুস্মিতা শর্মা। এলাকায় ওঁরা ‘অক্সিজেন দম্পতি’ (Oxygen Couple) নামেই পরিচিত। গতবছর থেকেই করোনা রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন তাঁরা। একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে চাহিদা বেড়েছে। আর তাতেই বেশ আতান্তরে পড়েছেন এই দম্পতি। কারণ, সিলিন্ডার সংখ্যা এক। ফলে পরিষেবা দিতে পারছেন না তাঁরা। তাই আবেদন আরও একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার (oxygen Cylinder) কোনও সহৃদয় ব্যক্তি যদি দান করেন।

ঠিক কীভাবে পরিষেবা দিচ্ছেন শান্তনু ও অনুস্মিতা? গত দেড় বছর ধরে নিজের কোলের সন্তানকে বাড়িতে রেখে পিপিইকিট (PPE Kit) পরে বাইকে করে আক্রান্তদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন দম্পতি। কখনও রোগীকে পৌঁছে দিচ্ছেন ওষুধপত্র, কখনও বা বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। কোথাও রোগীকে ভর্তি করছেন হাসপাতালে কোথাও  কনটেইনমেন্ট জ়োন হলে সেখানে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী। আর সবটাই বিনামূল্যে এবং নিজেদর খরচে।

শান্তনু বলেন, “মানুষ মানুষের জন্য। আমাদের নার্সিং ট্রেনিং স্কুল বন্ধ এখন। কিন্তু তা বলে তো পরিষেবা বন্ধ রাখতে পারিনা। কারোর কোনও প্রয়োজন হলে তাই ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু, একটামাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে পরিষেবা দিতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। কারণ, একটি সিলিন্ডার পাঠানো হলে তারপর রিফিল করিয়ে আনতে আনতে অন্য জায়গা থেকে ডাক আসছে, সেখানে, আরও একটি সিলিন্ডার পেলে এই সমস্যা থাকে না।” শান্তনুর সহধর্মিণী অনুস্মিতা বলেন, “আমি নিজে একজন নার্সিংয়ের ছাত্রী। মানুষের বিপদে তো আর চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারিনা। চেষ্টা করি যতটা সম্ভব সাহায্য করার। আমাদের ছোট ছেলেটিকে প্রতিবেশীর বাড়িতে রেখে যাই। ওঁরা ছেলেকে না দেখলে আমাদের পক্ষে কাজটা করা কঠিন হত। ওঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে এই মুহূর্তে আমাদের আরও একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দরকার। তাহলে, আমরা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে পারব। কেউ যদি এ ব্য়াপারে সাহায্য করেন তবে খুবই উপকৃত হই।”

শান্তনু-অনুস্মিতার এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তাঁরাই নাম দিয়েছেন ‘অক্সিজেন দম্পতি’। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শান্তনু অনুস্মিতা যেভাবে কাজ করছেন তাতে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য। তাই সবরকমভাবে ‘অক্সিজেন দম্পতিকে’ সাহায্য করতে প্রস্তুত তাঁরা। উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শেষ বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭, ৮৮৩। সোমবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৩ জন আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কলকাতায় করোনা আক্রান্ত ৩,১২১। মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের।

আরও পড়ুন: করোনার জেরে নেই ‘কাস্টমার’, পেটে টান, যৌনকর্মীদের পাশে দাঁড়াল ‘শ্রদ্ধা’

 

Next Article