উত্তর ২৪ পরগনা: করোনাকালে (Corona) সংক্রমণ রুখতে কিছুদিন আগেই নির্দেশিকা জারি করে সমস্ত লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করেছে রাজ্য সরকার। ফলে, নিত্য অফিসযাত্রীদের জন্য বাসই একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু, করোনার দাপট রুখতে পরিবহনেও কাটাছাঁট করেছে সরকার। অথচ, বেলাগাম পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃ্দ্ধিতে শিরে সংক্রান্তি বাসমালিক ও কর্মীদের। এই অবস্থায়, যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে একই ভাড়া (Bus Fare) বহাল রাখা ও আগামী ১৭ মে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান-বিক্ষোভের ডাক দিল ওয়েস্টবেঙ্গল বাস ও মিনিবাস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে বাস ও মিনিবাস সংগঠনের তরফে জানানো হয়, গত বছর লকডাউনের জেরে পুরোপুরি বন্ধ ছিল পরিবহন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবির হলেও, পরিবহন স্বাভাবিক হয়নি। বাস চললেও ছিল না যাত্রী। একইসঙ্গে প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছিল বাসভাড়া (Bus Fare)। ফলে হালে পানি ফেরেনি। নবান্নের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেও কোনও সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি। বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে ফের একবার মুখ থুবড়ে পড়েছে বাসের পরিষেবা। রাজ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাস ও অন্যান্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফলে ট্রেন বন্ধ থাকলেও সংখ্যায় কম চলছে বাস। বাসে গাদাগাদি ভিড় না হলেও রোজ বাড়ছে যাত্রী সংখ্যা, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেট্রোল ডিজেলের দাম। তাই যাত্রীদের কথা ভেবেই এ বার ভাড়া না বাড়ানোর ঘোষণা করেছে রাজ্য বাস ও মিনিবাস ওয়েলফেয়ার সংগঠন। একইসঙ্গে, লাগাতার জ্বালানির মূল্যবৃ্দ্ধি ও জিএসটি বসানোর প্রতিবাদে আগামী ১৭ মে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবেন বাসকর্মী-মালিকরা।
রাজ্য বাস ও মিনিবাস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (West Bengal State Bus and Minibus Welfare Association) সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বসুর অভিযোগ, নির্বাচনী কাজে যেসব বাস ভাড়া নিয়েছিল কমিশন, সেই সব বাসের ভাড়াও পুরোপুরি দিয়ে উঠতে পারেনি কমিশন। ফলে সমস্যায় পড়েছেন বাসকর্মীরা। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুভব করেই আগামী ১৭ মে তাই অবস্থান-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ক্ষমতায় এসে কোভিড নিয়ন্ত্রণকেই সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো গত বুধবার শপথ নিয়েই একগুচ্ছ নির্দেশিকার ঘোষণা করেন তিনি। রাজ্যে লকডাউন জারি করার পক্ষে নন মমতা। তবে, একাধিক বিধি-নিষেধ জারি করে কোভিড মোকাবিলার বার্তা দিয়েছেন তিনি। নবান্ন থেকে প্রকাশিত সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার থেকে একাধিক নিয়ম-বিধি চালু হয়েছে রাজ্যে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বন্ধ করা হয় রাজ্যের সব লোকাল ট্রেন। মমতার (Mamata Banerjee) ঘোষণার পর বুধবার সন্ধেয় ট্রেন বন্ধ থাকার কথা ঘোষণা করে রেল কর্তৃপক্ষ। ভিড় ট্রেনে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল বলেই এমন সিদ্ধান্ত। সময় কমানো হয় ব্যাংকের। সকাল ১০ টা থেকে ২ টো পর্যন্ত খোলা থাকবে ব্যাংক। মাসের সব শনিবারে বন্ধ রাখা হবে ব্যাংক। বিয়ে বা অন্য কোও অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না। জমায়েতের জন্য অনুমতি নিতে হবে। বেসরকারি অফিসের ক্ষেত্রে ওয়ার্ক ফ্রম হোমে অতিরিক্ত জোর। উপস্থিতির হার যাতে কোনোভাবেই ৫০ শতাংশের বেশি হতে না পারে, সে দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে। কোনও বিমান যাত্রী ও দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীদের আরটি-পিসিআর টেস্ট ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হবে না। রাজ্য পরিবহণের বাস ও মেট্রো রেল সংখ্যায় অর্ধেক হয়ে যাবে। বাজার খোলা থাকবে সকাল ৭টা থেকে ১০টা, বিকেল ৫টা থেকে সন্ধে ৭টা। কারখানা, ও চা বাগানে প্রতি শিফটে ৫০ শতাংশের বেশি কর্মী উপস্থিত হতে পারবেন না।