‘এ বার তো না খেতে পেয়ে মরে যাব!’, বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ লোকাল ট্রেন , চোখে অন্ধকার দেখছেন মুজিবুর, পরিতোষরা

নিত্যযাত্রীদের একাংশের দাবি, যাঁরা চাকুরিজীবি তাঁরা হয়ত বিকল্প ভাবতে পারবেন। কিন্তু যাঁরা, তা অস্থায়ী কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের কী হবে! তাঁদের যাতায়াতে শুধু নয়, পকেটের রেস্ত বাঁচাতে ট্রেনই ভরসা। এই পরিস্থিতিতেই রাজ্যে আছড়ে পড়তে চলেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। বুধবারে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে একদিনে করোনা (COVID19) আক্রান্ত ১৮ হাজার পার। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত ১৮ হাজার ১০২। রাজ্যে একদিনে করোনায় ১০৩ জনের মৃত্যু।

'এ বার তো না খেতে পেয়ে মরে যাব!', বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ লোকাল ট্রেন , চোখে অন্ধকার দেখছেন মুজিবুর, পরিতোষরা
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 06, 2021 | 12:13 AM

পশ্চিমবঙ্গ: করোনায় কাবু দেশ। রোজ ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের গ্রাফ। বঙ্গে ভোট মিটতেই করোনা নিয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে রাজ্যসরকার। আগামী বৃহস্পতিবার থেকেই সম্পূর্ণ বন্ধ হচ্ছে লোকাল রেলের (Local Train) পরিষেবা। প্রায় ৫০ শতাংশ করে দেওয়া হচ্ছে বাস-ট্রাম চলাচল। সরকারি ও বেসরকারি সকল কর্মক্ষেত্রেই প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ কর্মীকে ‘ওয়র্ক ফ্রম হোমের’ (Work from Home) নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো চোখে অন্ধকার দেখছেন ‘দিন আনি দিন খাই’ শ্রমিক-মজুররা। সমস্যার মুখোমুখি নিত্যযাত্রীরাও। বুধবার গোটা রাজ্য জুড়ে এই অস্থিরতার ছবি ধরা পড়ল।

পূর্ব মেদিনীপুরের স্টেশনে রোজ ডেলি প্যাসেঞ্জারি করেন মুজিবুর। পেশায় মুটে বাহক তিনি। মাঝেমধ্যে হকারিও করেন। তাতে পেট কোনওরকমে চললেও দিন চলে না। এর আগে করোনার প্রথম ঢেউয়ে লকডাউনের জেরে পুরোপুরি বন্ধ ছিল রুজিরোজগার। তারপর ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরলেও ফের ট্রেন বন্ধের জেরে মাথায় হাত মুজিবুরদের। তিনি বলেন, ”এর আগে যাহোক করে পেট চালাচ্ছিলাম, এখন তো না খেতে পেয়েই মরে যাব। আমরা কোথায় যাব! কে দেখবে আমাদের!” এক নিত্যযাত্রী বলছেন, ”সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে কারুর কিছু করার নেই। কিন্তু, যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের কী হবে! শুধু দুটাকার রেশন চালে তো পেট ভরবে না!”

খড়গপুর থেকে মেদিনীপুর যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্তকে আমি সমর্থন করি। মানুষকে বাঁচানোর জন্য যে পদক্ষেপ  করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাতে ভুল নেই। কিন্তু, যাঁরা রেলে-বাসে রোজ যাতায়াত করেন তাঁদের কী হবে!” রেল বন্ধ নিয়ে অন্য একটি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন শিয়ালদার এক নিত্যযাত্রী। তিনি বলেন, “রেল বন্ধ হল। বাসের পরিষেবাও অর্ধেক। এতে কি আদৌ লাভ হবে! মানুষকে তো কাজে বেরতেই হবে। ভিড় বাড়বে বাসে! করোনা আটকাবে কোথায়!”

শিয়ালদায় মুটের কাজ করেন পরিতোষ। নিজের বাড়ির জমিতে অল্পস্বল্প সবজিও ফলান। সেই বেচেই দিন চলে। ট্রেন বন্ধ হওয়ায় রীতিমতো জীবন-মরণের আশঙ্কা দেখছেন পরিতোষ। বলছেন,  “সরকার কি আমাদের কথা ভাবল! ট্রেন টা তো চালু থাকুক। পঞ্চাশটা টাকা হলেও সংসারে দিতে পারি তবে। এতগুলো পেট তো না খেয়ে মরবে! আমাদের আর কী আছে!” প্রায় একই ছবি গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়ে। মুটে-মজুর ছাড়া রেল হকারদের প্রায় পুরোই বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে রোজগার। এই পরিস্থিতিতে, সরকারই ভরসা বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু, বিকল্প কী? সে উপায় জানেন না কেউ। তবে, পরিপূর্ণ লকডাউনের পক্ষপাতি নন কেউই।

নিত্যযাত্রীদের একাংশের দাবি, যাঁরা চাকুরিজীবি তাঁরা হয়ত বিকল্প ভাবতে পারবেন। কিন্তু যাঁরা, তা অস্থায়ী কাজের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের কী হবে! তাঁদের যাতায়াতে শুধু নয়, পকেটের রেস্ত বাঁচাতে ট্রেনই ভরসা। এই পরিস্থিতিতেই রাজ্যে আছড়ে পড়তে চলেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। বুধবারে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে একদিনে করোনা (COVID19) আক্রান্ত ১৮ হাজার পার। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত ১৮ হাজার ১০২। রাজ্যে একদিনে করোনায় ১০৩ জনের মৃত্যু। শুধু কলকাতাতেই একদিনে ২৫ জনের মৃত্যু। শুধু উত্তর ২৪ পরগনাতেই একদিনে ২৭জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, টিকাদান তো দূর ও জীবন বাঁচানোই সর্বাপেক্ষা জরুরি বলেই মনে করছেন আমজনতা। কিন্তু, পেটের খিদের কী হবে! মুজিবুর-পরিতোষরা জানেন না তাঁদের কী পরিণতি হবে! তবু আশাতেই দিন গুনছেন তাঁরা। একদিন পৃথিবী সুস্থ হবে।

আরও পড়ুন: বৃহস্পতিবার থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ লোকাল ট্রেন, গণ-পরিবহণ ও মেট্রোর ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত মমতার?