জলপাইগুড়ি: রাজ্যে করোনা সংক্রমণ রুখতে একদিকে যেমন টিকাকরণে (Vaccination) জোর দেওয়া হচ্ছে, তেমনই দিনভর পরিষেবা সচল রাখতে কড়া নজরদারি প্রশাসনের। বুধবার, মন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবার হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে যদিও সম্পূর্ণ অন্য ছবি দেখলেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বুলু চিক বড়াইক (Bulu Chik Baraik)। ধুপগুড়ি হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। হাসপাতাল চত্বরে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। টিকাপ্রাপকদের মধ্যেও কোনও সামাজিক দূরত্ব নেই। পরিস্থিতি দেখে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও ধুপগুড়ি থানার আইসিকে রীতিমতো ধমকও দেন মন্ত্রী। এদিন, মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ধূপগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক মিতালী রায়, পুরসভার চেয়ারপার্সন ভারতী বর্মন, ধূপগুড়ি পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান রাজেশ কুমার সিং, ধূপগুড়ি থানার আইসি সুজয় তুঙ্গা, ভার প্রাপ্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. সুরজিত ঘোষ সহ অন্যান্যরা।
বুধবার, হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে মন্ত্রী দেখেন, টিকাকরণ কেন্দ্রে (vaccination Center) নেই কোন সামাজিক দূরত্ববিধি। রীতিমতো ভিড় করে চলছে টিকাগ্রহণ। একই ছবি দেখা যায় কোভিড ওয়ার্ডেও। সেখানে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করাতে আসা রোগীরা সামাজিক দূরত্ব বিধি না মেনেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভিড় করে। পরিস্থিতি দেখে জেলা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও ড. সুরজিৎ ঘোষকে রীতিমতো ধমক দেন মন্ত্রী বড়াইক। হাসপাতাল চত্বরে কেন এই অব্যবস্থা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী। অবস্থা সামাল দিতে আসরে নামেন খোদ আইসি সুজয় তুঙ্গা। এরপর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের অস্থায়ী সেফহোমও পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। কথা বলেন স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গেও। পরিদর্শন শেষে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে বৈঠকও করেন মন্ত্রী বড়াইক। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ধূপগুড়ির পৌরপ্রশাসক ও ভাইস চেয়ারম্যান।
বৈঠক শেষে মন্ত্রী বুলু চিক বড়াইক বলেন, “মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে সরকারি স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ধূপগুড়ি হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে আসা লোকেরা যেভাবে ভিড় করেছে তাতে কোভিড ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমি হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখলাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বললেন তাদের একটি জেনারেটরের প্রয়োজন। আমি বিষয়টি দেখছি। তাছাড়া ডাক্তার-নার্স পুলিশ সবাই করোনার জন্য লড়াই করছেন। মানুষ যাতে আরো ভালো পরিষেবা পায় সেজন্য আমি জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলব। আজ হাসপাতালের যা পরিস্থিতি দেখলাম, তা যেন আর দ্বিতীয়দিন দেখতে না হয়।”
চা-বাগানের শ্রমিক ছিলেন একদা। সেখান থেকে প্রতিরোধের লাল ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়েছিলেন বুলু চিক বড়াইক। তারপর দল বদল করে তৃণমূলে। সেখান থেকেই পরপর দুবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। একুশের বঙ্গ ভোটে এই প্রথম কোনও বিধায়ককে মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মালবাজারের বিধায়ক বুলু চিক বড়াইকের লক্ষ্য ছিল চা শ্রমিকদের উন্নয়ন। প্রথমবার মন্ত্রিত্ব পেয়েই করোনা সামাল দিতে মাঠে নেমে পড়েছেন বড়াইক। মুখ্য়মন্ত্রীর নির্দেশ মতো করোনা মোকাবিলাই এখন প্রাথমিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনেই বুধবার হাসপাতাল পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। উল্লেখ্য, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শেষ বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৭, ৮৮৩। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা ১৫৩। দৈনিক সংক্রমণের হার কমলেও কমছে না মৃতের সংখ্যা। যা ইতমধ্যেই চিন্তা বাড়াচ্ছে রাজ্য় স্বাস্থ্য দফতরের। দক্ষিণবঙ্গে হাওড়া হুগলি এবং উত্তরবঙ্গেও চিন্তা বাড়াচ্ছে কোভিড গ্রাফ। গত ২৪ ঘণ্টায় দার্জিলিঙে দৈনিক সংক্রমণ দেখা গিয়েছে ৮৬১ জনের। মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। জলপাইগুড়িতে দৈনিক সংক্রমণ ৫৪৯ জনের, মৃত ৯। দুই দিনাজপুর মিলিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের।
আরও পড়ুন: ভ্যাকসিন নিতে হুড়োহুড়ি, কোভিডবিধির জলাঞ্জলি! টিকাকরণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ ব্যবসায়ীদের