ভাঙড়: রেহাই নেই বিডিও-র গাড়িচালকেরও! জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে বিডিওর গাড়িচালক ও তাঁর পরিবারকে মারধর করার অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে ভাঙড়ের কাশীপুর থানার নিমকুড়িয়া গ্রামে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যদিও ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ভাঙড়-২ ব্লকের বিডিও কার্তিক চন্দ্র রায়ের গাড়ির চালক এমদাদুল হক মোল্লা নিমকুড়িয়া গ্রামে স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের নিয়ে বসবাস করেন। এদিন তাঁর বাড়ির সামনে পাঁচিল দেওয়ার কাজ চলছিল। অভিযোগ, সেই সময় নিমকুড়িয়া গ্রামের তৃণমূলের বুথ সভাপতি হাকিম মোল্লা, ফিরোজ মোল্লা সহ শাসক দলের দুষ্কৃতীরা এসে তার পাঁচিল দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দেন। কী কারণে তাঁর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদ জানান এমদাদুল হক মোল্লার স্ত্রী রাইমা বিবি। তখনই হাকিম মোল্লা ও তাঁর দলবল এমদাদুল হক মোল্লার স্ত্রী- পুত্রদের কিল,চড়, ঘুসি মারতে থাকে বলে অভিযোগ। এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। এরপর প্রতিবেশীরা বাঁচাতে এলে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
এই মারধরের ঘটনায় এমদাদুল হকের স্ত্রী রাইমা বিবি, মেয়ে ইভানা ও পুত্র মোমিনুল হক মোল্লা গুরুতর জখম হন। মোমিনুলের কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। পরে প্রতিবেশীরা আহতদের জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান। বর্তমানে সেখানেই তাঁরা চিকিৎসাধীন। ঘটনার সময় বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না এমদাদুল হক মোল্লা। পরে ঘটনার খবর পেয়ে এমদাদুল হকের সঙ্গে ঘটনাস্থলে যান ভাঙড়-২ বিডিও কার্তিক চন্দ্র রায় ও কাশীপুর থানার পুলিশ। তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।
এ বিষয়ে এমদাদুল হক মোল্লা বলেন, “আমি বাড়ির সামনে চার ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়ে পাঁচিল দেওয়ার কাজ করছিলাম। কিন্তু হাকিম মোল্লা ও তাঁর অনুগামীরা কোন কথা না শুনে বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা চালায়। এমনকি আমার স্ত্রী, ছেলে, মেয়েকে মারধর করে। ফোন করে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।” এদিকে, ঘটনার পর থেকে পলাতক হাকিম মোল্লা। তাঁর সঙ্গে কোনভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি।
কিন্তু, সরকারি আধিকারিকের গাড়িচালকের পরিবারের উপর শাসকদলের হামলার ঘটনা আরও একবার গোষ্ঠী কোন্দলকে উসকে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই হামলার কারণ স্পষ্ট নয় বলে জানান বিডিও কার্তিক চন্দ্র রায়। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। এমদাদুল তাঁর নিজের জায়গায় পাঁচিল দেওয়ার কাজ করছিলেন। যদি এটা নিয়ে কোথাও কোনও সমস্যা থাকত, তাহলে তা আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া যেতে পারত।”
তবে এই ঘটনা মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আরাবুল ইসলাম। তিনি বলেন, “যাঁরা এই ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত তারা কোনভাবেই আমাদের দলের কর্মী হতে পারেন না। আমরা দলগতভাবে এই ধরনের ঘটনাকে সমর্থন করি না। পুলিশকে বলেছি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।” অভিযুক্ত সকলের খোঁজে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ভাঙড় থানার পুলিশ।